- মঈনুল হক
আমাদের সমাজে যৌনস্বাস্থ্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা যেন এক ঘোরতর বাজে বিষয়। তবে এ বিষয়ে অজ্ঞতার অভাবে ভুক্তভোগী হয় অনেকে; কলহ হয় দাম্পত্যে, সংসারে। তাই সেক্সুয়াল এডুকেশন জরুরি।
পুরুষের যৌন অক্ষমতা (মেল সেক্সুয়াল ডিস ফাংশন) বলতে বোঝায়, তার সঙ্গীর সঙ্গে সন্তুষ্টিজনক যৌন সম্পর্ক অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিটিভিত্তিক সার্ভেতে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সের পুরুষের মধ্যে অন্তত ৫২ ভাগ পুরুষের পুরুষাঙ্গ শক্ত না হওয়া সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ ভাগের সামান্য, ২৫ ভাগের মাঝামাঝি এবং ১০ ভাগের পুরো সমস্যা রয়েছে।
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের ওপরের বয়স্ক পুরুষের মধ্যে ৭০ ভাগ যৌন সম্পর্ক স্থাপন (সেক্সুয়ালি অ্যাকটিভ) করে। তবে এদের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ হয়। পুরুষের যৌন অক্ষমতা হওয়ার একটি অন্যতম বিষয় হলো, সহবাসের সময় পুরুষাঙ্গ পর্যাপ্তভাবে শক্ত না হওয়া বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ইডি)।
কেন হয়?
এর কারণ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার, ইউরোলজিস্ট ও অ্যান্ড্রোলজিস্ট ডা. মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘যারা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়া যারা অতিরিক্ত ধূমপান করে, তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আবার শ্রোণি (পেলভিক) এলাকার কোনো ক্যানসার বা অন্য কোনো রোগের জন্য রেডিওথেরাপি নেয়া অথবা সার্জারি করা পুরুষাঙ্গ শক্ত না হওয়ারও কারণ। মানসিক বিভিন্ন বিষয়, যেমন আত্মবিশ্বাসহীনতা, বিষণ্ণতা, উদ্বিগ্ন হওয়া, সম্পর্কে অসন্তুষ্টি ইত্যাদিও এর অন্যতম কারণ।
একে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা:
১. মানসিক
২. শারীরিক রোগব্যাধি সম্পর্কিত
৩. মিশ্র ধরনের অর্থাৎ মানসিক ও শারীরিক রোগব্যাধি মিলিত
মানসিক
কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক যৌন উত্তেজনার ঘাটতি, বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যৌন উত্তেজনার ঘাটতি, কোনো একটি নির্দিষ্ট সম্পর্কে উত্তেজনা না পাওয়া অথবা সঙ্গী থেকে ভয়-ভীতি পাওয়া বা মানসিক দ্বন্দ্ব, জীবনের বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়া, সঙ্গীকে সন্তুষ্টি দিতে না পারার ভয় ইত্যাদি কারণে বিষয়টি ঘটতে পারে।
রোগব্যাধি সংক্রান্ত
স্নায়বিক অসুখের কারণে যেমন, স্মৃতিভ্রম (ডিমেনসিয়া), পারকিনসনিজম, স্ট্রোক, মেরুরজ্জুর (স্পাইনাল কর্ড) আঘাত ও বিভিন্ন রোগে এটি হতে পারে। অপরদিকে ডায়াবেটিস, নিয়মিত মদ্যপান, ভিটামিনের অভাবের কারণে এই স্নায়বিক সমস্যা হয় ।
অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। পুরুষাঙ্গের শিরা বা ধমনির বিভিন্ন রোগে এমন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার বিভিন্ন ওষুধের নিয়মিত সেবনের কারণে হতে পারে। যেমন: অ্যান্টিসাইকোটিক, অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ধরনের ওষুধ।
মিশ্র ধরনের
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মিশ্র প্রকৃতির কারণ থাকে। অর্থাৎ মানসিক কারণ, সঙ্গে শারীরিক সমস্যা।
চিকিৎসা
চিকিৎসার বিষয়ে ডা. মধুসূদন মণ্ডলের পরামর্শ-
এ ধরনের রোগীদের প্রথমত করণীয় হলো, নিজের ও পাশাপাশি সঙ্গীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করা। শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। প্রয়োজনে কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করতে হবে।
এ রোগের চিকিৎসা দুভাবে করা হয়। যথা:
১. নন-সার্জিক্যাল
২. সার্জিক্যাল
নন-সার্জিক্যাল
ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, দীর্ঘ সময় সাইকেল না চালানো, মদ্যপান ও ধূমপান বন্ধ রাখা। যেসব ওষুধ রোগটির কারণ হতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা। প্রয়োজনে যৌন ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা। হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হলে হরমোনথেরাপি নেওয়া। প্রচলিত ওষুধ যেমন, সিলডেনাফিল, টাডালাফিল ইত্যাদি চিকিৎসক (অ্যান্ড্রোলজিস্ট)- এর পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করা যায়। অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে ইনট্রাকেভারনাস ইনজেকশন, ট্রান্স ইউরেথ্রালথেরাপি, ভ্যাকুয়াম কন্সট্রিকশন ডিভাইস এগুলো নেয়া যেতে পারে।
সার্জিক্যাল
পুরুষাঙ্গের শিরা বা ধমনির সমস্যা হলে কখনো কখনো সার্জারি করে সমস্যার সমাধান করা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পেনাইল প্রোসথেসিস ব্যবহার করা যেতে পারে।
Privacy Overview
This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.