ফিচার ডেস্ক
ষষ্ঠী থেকে দশমী- প্রতিমা দর্শন, সাজপোশাকে নতুনত্বের পাশাপাশি খাবারেও আনা চাই বৈচিত্র্য। না হলে কী আর পূজা জমে? মন্দিরের প্রসাদ তো রয়েছেই, পাশাপাশি বাড়িতেও পূজার সময়টায় তৈরি হয় নানা রকম মিষ্টান্ন-সবজির আইটেম। পূজার সময় খাওয়া হয় এমন কিছু খাবারের রেসিপি জানিয়েছেন সরস্বতী সাহা।
পাবনার সাগরকান্দির গৃহিণী সরস্বতী সাহার নিজের বাড়িতেই পূজা হয়। তবে এবার ঢাকায় পালন করছেন দুর্গোৎসব। জানান, বাড়ির পূজার আনন্দই অন্য রকম। তবে ঢাকাতেও আনন্দ হয়। ঢাকায় যেকোনো সময় মণ্ডপে যাওয়া যায়; অনেক ধুমধাড়াক্কা হয়।
চলুন জেনে নিই রেসিপিগুলো :
১. কুমড়ো ছানার ছক্কা (৪ জনের জন্য)
উপকরণ
আলু ২টি (মাঝারি আকারের), কুমড়ো ২০০ গ্রাম, দুধ আধা কেজি, সিদ্ধ ছোলা এক মুঠো, চিনা বাদাম ১ মুঠো, জিরা আধা চা চামচ, তেজপাতা ২টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, হলুদের গুঁড়া আধা চা চামচ, জিরার গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া আধা চা চামচ, টমেটো ২টি, গরম মসলা- এলাচ ২টি, লবঙ্গ ২টি দারুচিনি ২ ইঞ্চি, ঘি ২ চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমে একটি পাত্রে দুধ জ্বাল দিন। এবার দুধের বলক উঠলে লেবুর রস দিয়ে ছানা কেটে নিন। এবার আলু ও কুমড়ো ডুমো করে কেটে নিন। চুলায় একটি পাত্রে তেল গরম করে আলু ভেজে নিন। ভাজা হয়ে এলে আলু উঠিয়ে কুমড়ো ভেজে নিন। এবার তেলে আস্ত জিরা, তেজপাতার ফোঁড়ন দিন। টমেটো দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে নিন। এবার গুঁড়া মসলা ও লবণপানিতে গুলে টমেটোর মধ্যে দিয়ে কষাতে থাকুন।
কষানো হয়ে এলে ভাজা আলু ও কুমড়ো ছেড়ে দিন। একটু নাড়াচাড়া করে ছানা, ছােলা, বাদাম দিয়ে দিন। আবার নেড়ে নিয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে দিন। এবার হালকা আঁচে ঢেকে রাখুন। মাখা মাখা হয়ে এলে গরম মসলা গুঁড়া করে ছড়িয়ে দিন। সঙ্গে ঘি দিয়ে নেড়ে নিন। নামানোর আগে চিনি দিন।
২. কাকরোলের পুড়
উপকরণ
কাকরােল ৪টি, সরিষা ২ চা চামচ, টমেটো ১টি, হলুদের গুঁড়া এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ, লবণ স্বাদমতো, কাঁচামরিচ ৩টি, সয়াবিন তেল ১ টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমেই কাকরোল দুই ভাগ করে কেটে নিন। এবার হালকা ভাঁপে সিদ্ধ করে নিন। এবার কাকঁরোল থেকে চামচ দিয়ে ভেতরের বিচির অংশটুকু আলাদা করে নিন। এবার সিদ্ধ বিচি, সরিষা, কাঁচা মরিচ এক সঙ্গে বেটে নিন। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে টমেটো ছেড়ে দিন।
একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে সরিষা বাটা, স্বাদমতো লবণ ও আধা কাপ পানি দিয়ে নাড়তে থাকুন। একটু মাখা মাখা হয়ে আসলে নামিয়ে নেন। এবার কাকরোলের ভেতর সরিষার পুরটুকো ভরে বেসনের ব্যাটারে চুবিয়ে তেলে ভেজে নিন। ভাজার সময় খেয়াল রাখবেন চুলার আঁচ যেন হালকা থাকে।
৩. নারকেল মোচার ঘণ্ট
উপকরণ
কলার মোচা ১টি (মাঝারি আকারের), নারকেল বাটা ১ কাপ, আলু ২টি (মাঝারি আকারের), জিরা বাটা ২ টেবিল, আদা বাটা ১ চা–চামচ, এলাচি ৪টি, দারুচিনি ৭ টুকরা, তেল ১ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, গরম মসলার গুঁড়া ১ চা–চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া ১ চা–চামচ, মরিচের গুঁড়া ৩ চা–চামচ, হলুদের গুঁড়া ২ চা–চামচ, চিনি ২ টেবিল চামচ ও জল আধা কাপ।
যেভাবে তৈরি করবেন
কলার মোচা বেছে কুচিয়ে নিতে হবে। এরপর জলে সিদ্ধ করে জল ফেলে হাত দিয়ে চটকে নিতে হবে। এবার কড়াইতে তেল গরম করে সব মসলা কষিয়ে নিন। এরপর নারকেল বাটা দিয়ে আবার অনেকক্ষণ কষাতে হবে।
আরেকটি কড়াইয়ে আলাদা করে আলু ভেজে রাখুন। আলু ভাজা হয়ে এলে তা নারকেল বাটার মধ্যে দিয়ে কিছু সময় কষাতে হবে। আলু কিছুটা নরম হয়ে এলে মোচা দিয়ে দিন। ১০ মিনিট নাড়াচাড়া করে আধা কাপ জল দিতে হবে। জল শুকিয়ে এলে ভাজা জিরার গুঁড়া, গরমমসলার গুঁড়া ও একটু চিনি দিয়ে নেড়েচেড়ে নিতে হবে। নামানোর আগে ঘি ঢালুন।
৪. ছানার ডালনা
উপকরণ
২ দুধ লিটার, লেবুর রস ৩ টেবিল চামচ, ময়দা ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ কাপ, জিরা ১ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ১টি, তেজপাতা ২ টি, শুকনো মরিচ ২টি, আলু মাঝারি আকারের ২টি, কাশ্মীরী মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ,
জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, এলাচ ২টি , আদা বাটা ১চা চামচ, টমেটো কুচি ১ টি, লবণ ও চিনি স্বাদমতো।
যেভাবে তৈরি করবেন
প্রথমেই দুধ ফুটিয়ে নিয়ে লেবুর রস দিয়ে আবার নেড়ে নিন। দুধ কেটে ছানা আলাদা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এরপর একটি কাপড়ে রেখে ছানাটা ছেঁকে আলাদা করতে হবে। এবার ৩০ মিনিট এই কাপড়ে বেঁধে ছানা ঝুলিয়ে রাখুন।
ছানাটা একটি পাত্রে নিয়ে লবণ, চিনি, ময়দা, ১ টেবিল চামচ তেল এবং এক টেবিল চামচ ভাজা মশলা দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। মাখানো হয়ে এলে বরফি আকারে কেটে নিন। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে ছানা গুলো ভাজুন। একই কড়াইয়ে তেল গরম করে তেজপাতা, শুকনো মরিচ দিন। মশলা ফুটতে থাকলে এতে আলু এবং লবণ দিয়ে নেড়ে নাড়তে থাকুন। আলু ভাজা ভাজা করে নিতে হবে।
এবার ছোট একটি বাটিতে কাশ্মীরী মরিচের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া এবং আদা বাটা নিন। এতে ২ টেবিল চামচ পানি দিন। ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। এটা আলুর সঙ্গে দিয়ে দিন। নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত তেল মশলার ওপরে উঠে আসে। এবার টমেটো দিন। টমেটো নরম হয়ে এলে দেড় কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঝোল ফুটে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এবার আলু সিদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হয়ে এলে এতে ছানা দিয়ে ঢেকে ৫ থেকে ৭ মিনিট রাখুন।
৫. আমড়ার চাটনি
উপকরণ
আমড়া ৪টি, খেজুর ৮টি, কিসমিশ ৫০ গ্রাম, চিনি ২০০ গ্রাম, পাঁচফোড়ন দেড় চা চামচ, লবণ স্বাদমেতা, তেল ১ টেবিল চামচ, হলুদের গুড়া ১ চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ।
যেভাবে তৈরি করবেন
আমড়া প্রথমে সিদ্ধ করে নরম করে নিন। এবার চুলায় কড়াই গরম করে তেল দিয়ে আধা চা চামচ পাঁচফোড়ন বাগার দিন। বাকি পাচফোঁড়ন কড়াইয়ে টেলে নিয়ে বেটে রাখুন। এবার পাঁচফোড়নের বাগারে একে একে আমড়া, খেজুর, কিসমিস দিয়ে দিন। একটু নেড়ে নিয়ে আড়াই কাপ পানি দিয়ে দিন। একটু বলক এলে চিনি ঢেলে দিন। এবার মাখো মাখো হয়ে এলে ওপরে পাঁচফোড়নের গুঁড়া দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন।