উজ্জ্বলা লিমিটেড, বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নারীকে যোগ্য করে তুলতে অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে, বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিংয়ের সব খুঁটিনাটি শেখানো হয় এখানে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজ রইল প্রথম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাশ্বতী মাথিন।
পর্ব ১ : জান্নাত হোসেন খান
ছোটবেলা থেকে মেকআপের বিষয়ে আগ্রহ ছিল জান্নাত হোসেন খানের। কাউকে মেকআপ করতে দেখলে ভীষণ উৎসাহ নিয়ে দেখতেন। ব্লাশন, আইশ্যাডো, আইলাইনারের ছোঁয়ায় একটা মানুষকে কী সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা যায়, ভাবতেই অবাক হতেন। ধীরে ধীরে নিজেও একটু-আধটু মেকআপ করতে শুরু করেন। একটা সময় ভাবলেন, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবেন। প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিলেন ‘উজ্জ্বলা’-কে।
মেকআপের হাত ভালো দেখে বড় চাচি, মেজ চাচি ও ফুফাতো বোন উৎসাহ দিলেন প্রশিক্ষণ নিতে। কিন্তু সে সময় বাদ সাধলেন বাবা। বাবার চাওয়া, মেয়ে লেখাপড়ায় বেশি মনোযোগী হোক। পরে অবশ্য বাবাও রাজি হন। কেবল রাজিই হননি, যথেষ্ট সহযোগিতাও করেছেন। এরপর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু। জানান, ২০১৯ সালে আমি উজ্জ্বলা থেকে অ্যাডভান্স মেকআপ কোর্স করি। উজ্জ্বলা কেবল আমাকে বিউটি আর্টিস্ট হতে শেখায়নি, কীভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যায়, সে বিষয়টি শিখিয়েছে।
জান্নাত হোসেন খান ২০১৬ সালে স্কুল অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে এসএসসি এবং ২০১৮ সালে কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ইংলিশ বিভাগে লেখাপড়া করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি ল্যাঙ্গুয়েজ লিগ, এআইএম ইনিশিয়েটিভ ফাউন্ডেশন ও ব্লাড কানেকশন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া ইউএপি সেন্ট্রাল ইংলিশ লিগ ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি এবং ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আজীবন ভলান্টিয়ার হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার কারণে আমাকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইংরেজি শেখাতে হতো। শেখানোর কাজটি করতে এসে আমার বারবার যে মানুষটির কথা মনে পড়ত, তিনি উজ্জ্বলার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম নাম আফরোজা পারভীন। আফরোজা ম্যাম আমাদের গ্রুমিং শেখাতেন। তার প্রশিক্ষণ দেওয়ার গুণ অসাধারণ। মুখ দেখলেই কী করে যেন বুঝে যেতেন মনের কথা। কেউ কষ্টে রয়েছে বা কানও মন খারাপ, অনায়াসে বুঝে যেতেন সব। উজ্জ্বলা থেকে শিখেছি কোন জায়গায় কোন ধরনের পোশাক পরতে হয়, কীভাবে মানুষকে উৎসাহ দিতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ভালো ফলাফল করি আমি। আমার সাজ সবাই খুব পছন্দ করে। বর্তমানে সোশ্যাল ওয়ার্কের পাশাপাশি মেকআপের কাজও করছি। আমার বাড়িতে এসে মেয়েরা সাজে। কাউকে সুন্দর করে সাজাতে পারলে ভীষণ তৃপ্তি লাগে।’
পার্লারে কোনো মেয়ে কাজ করছে, বিষয়টি আমাদের সমাজে এখনো ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় না। কাজ করতে গিয়ে অনেক ধরনের সামাজিক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। ‘পার্লারের মহিলা বা মেয়ে ভালো নয়’- এমন একটি বাজে ধারণা রয়েছে সমাজে। অনেক পরিবারে তো মেয়ে পার্লারের কাজ শিখবে এবং মানুষকে সাজাবে, এটি এখনো মেনেই নিতে পারে না। এটা যেন খুব হীন একটি কাজ। এ ধরনের কথা আমাকেও শুনতে হয়েছে। খুব কেঁদেছি। মন ভেঙে গেছে এসব শুনে। তবুও বাধা অতিক্রম করে কাজ করছি। এটি হালাল কাজ। এভাবে একজন মানুষ আয় করলে সেটা দোষের নয়। আর বাংলাদেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিকে কানিজ আলমাস, ফারজানা শাকিল, আফরোজা পারভীন আপারা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বাস করি, তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমরাও একে আরও এগিয়ে নিতে পারব- জানান জান্নাত হোসেন খান।
উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিতে পেরে এবং নিজেকে উজ্জ্বলার একজন সদস্য ভাবতে পেরে গর্ব লাগে জানিয়ে জান্নাত বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের ভেতর একটি সুপ্ত আগুন থাকে। আমার ভেতরের আগুনটাকে উজ্জ্বলা বের করে নিয়ে এসেছে। আগে খুব নার্ভাস থাকতাম। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেই নার্ভাসনেস কেটে গেছে। আমি নিজে আলোকিত হয়েছি। অন্যদের মাঝেও সেই আলোর দীপ্তি ছড়িয়ে দিতে পারছি। ভবিষ্যতে উজ্জ্বলার মতো একটি প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছে রয়েছে, যেখানে কেবল মেকআপের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে না; একজন নারীকে কীভাবে শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করে গড়া যায়, সেই কাজও করা হবে।’
Thank you Shatkahon for cover my story. This really mean to me.