ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলী ক্যানসারের প্রকোপ বেড়েছে। ভেজাল খাবার, খাবারে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত দ্রব্য মেশানোর কারণে এই ক্যানসার বাড়ছে বলে মনে করেন কোনাে কোনো গবেষক।
এশিয়ার চিন, জাপান ও দক্ষিণ এশিয়াতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব এখনও আশঙ্কাজনক। এ রোগে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি আক্রান্ত হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সমাজের উচ্চবিত্তদের এই ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
রোগের কারণ
হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়া মানুষের পাকস্থলী ও ডুওডেনামে আলসারের সৃষ্টি করে। জীবাণুটি পাকস্থলীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষণস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। ক্ষণস্থায়ী প্রদাহ থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি হয়। অবশেষে এটি ক্যানসারে পরিণতি ঘটায়। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে কেবলমাত্র হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি দিয়ে আলসারটিই ক্যানসারে পরিণত হয়।
ধূমপান ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য বিশেষভাবে দায়ী হলেও পাকস্থলীতে ক্যানসার সৃষ্টিতে এর ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। ধূমপায়ীরা অধিকহারে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া বেশি লবণ ও ধোঁয়াযুক্ত খাবার, লবণে সংরক্ষিত খাবার, নাইট্রাইট ও নাইট্রেট সমৃদ্ধ খাবারকে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, তারা অন্যান্য রক্তের গ্রুপধারীদের চেয়ে বেশি পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বংশগত কারণকেও আজকাল উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
লক্ষণ
পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে পরবর্তী পর্যায়ে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, রক্তবমি, কালো রক্তযুক্ত পায়খানা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর উপরের পেটে চাকা থাকে। অনেকে জণ্ডিস দিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন। পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগী জন্ডিস দিয়ে আক্রান্ত হলে বুঝতে হবে এটি লিভারে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের পেটে পানি আসতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসারটি ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থিতে ছড়াতে পারে। নারীর ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি হাড়, পেরিটোনিয়ামও এ ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে রোগীর অবস্থা আরোও খারাপ করে ফেলে।
লেখক
রেজিস্ট্রার, ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসাইন্স