সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
বেগুণি ও ম্যাজেন্টা রঙের মিশ্রণে তৈরি স্টুডিওর সেট। সামনে মেরুণ ও সাদা রঙের সোফা সাজানো। পেছনের দেয়াল জুড়ে রয়েছে টেলিভিশন স্ক্রিন। এর পর্দায় দেখা যাচ্ছে ‘লেডিস ক্লাব’ এর লোগো।
ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬ টা। শুরু হলো সরাসরি সম্প্রচারিত দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান নেক্সাস লেডিস ক্লাব। সঞ্চালনায় হয়তো রয়েছেন, ড. সুর্বনা নওয়াদীর, নাদিয়া হক অথবা অহনা তাসনিম খান। আর পেছনের কারিগর হিসেবে রয়েছেন নেক্সাস টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রযোজক জাকিয়া সুলতানা।
২০২১ সালের নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া লেডিস ক্লাব অনুষ্ঠানটি ইতোমধ্যে এক বছর পূর্ণ করেছে। এরই মধ্যে অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘নেক্সাস লেডিস ক্লাব’ পরিণত হয়েছে হাজার হাজার নারীর প্রাণের আড্ডায়। নারীদের নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়াতে অনেক অনুষ্ঠান প্রচারিত হলেও একে একদমই ভিন্নধর্মী বলা চলে। এর ভিন্নধর্মিতার কারণ কী? উত্তরে অনুষ্ঠানটির প্রযোজক জাকিয়া সুলতানা বললেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিলো সব শ্রেণি-পেশার নারীদের নিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো। এখানে অংশ নিতে পারে সেলিব্রেটিরা ছাড়াও উদ্যোক্তা, গৃহিনী, সাংবাদিক, লেখক, অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, চিকিৎসক, নৃত্যশিল্পী ও রাজনীতিবিদগণ। যারা নিজেদের ভাবনা, মনের কথা তুলে ধরতে চায় তারা প্রত্যেকেই লেডিস ক্লাবের স্টুডিওতে অতিথি হতে পারে। কেবল বাংলাদেশেরই নয়, অন্যান্য দেশেরও নারী সেলিব্রেটি ও অতিথিরা অংশ নেয় অনুষ্ঠানে।’

অনুষ্ঠানে স্টুডিও অতিথিদের পাশাপাশি জুমে অংশ নিতে পারে সব শ্রেণি-পেশার নারী। অনুষ্ঠান চলাকালীন জুম লিংকের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তারা যুক্ত হয়। মন খুলে নিজের কথা, ভাবনাগুলোকে মেলে ধরে একে অপরের সঙ্গে। আড্ডা আলোচনার মধ্য দিয়ে সচেতনতামূলক বিষয় বেরিয়ে আসে। কথার ফাঁকে ফাঁকে কখনো কখনো থাকে গান, কবিতা। আর সঞ্চালকের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় জমে উঠে আড্ডা। এভাবে কখন যে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। আর অনুষ্ঠানের টপিকগুলোও নির্বাচন করা হয় গতানুগতিক ভাবনার বাইরে। কখনো কখনো এর থিম হয়, ‘আপনার চেয়ে আপন যে জন’, ‘সাথে আছি, পাশে আছি’, ‘আর নয় ছাড়’, ‘প্রথম সিনেমা দেখার স্মৃতিকথা’, ‘খবরের শিরোনামে’ ইত্যাদি। জাকিয়া সুলতানা জানালেন, টপিকগুলো আমরা এমনভাবে নির্বাচন করি যেন যেকোনো নারীই এর সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে পারে এবং নিজের ভাবনা বিনিময় করতে পারে। আপন মনে করে আড্ডায় অংশ নিতে পারে দ্বিধা ভুলে। আর এ কারণেই যেকোনাে বয়সের নারীরা অংশ নিচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে।

কেবল টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই সীমিত নয় ‘লেডিস ক্লাব’। রয়েছে NEXUS LADIES CLUB নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। যেখানে নারীরা তাদের কাজ, ভাবনা, ভ্রমণের ছবি, পছন্দ- অপছন্দগুলোকেও শেয়ার করতে পারে। অনেক নারী উদ্যোক্তারা তাদের তৈরি পন্যের ছবি, রন্ধনশিল্পীরা রান্নার ছবি, কবিতা, বন্ধুদের আড্ডার ছবি ও ভিডিও আপলোড করে, বিষয় অনুযায়ী তাদের ভাবনার কথাও লিখে পোস্ট করতে পারে সেখানে। জাকিয়া সুলতানা জানান, আমাদের টেলিভিশনের লগোতেই বলা হয়েছে ‘নেক্সাস টেলিভিশন – বিজনেস ও লাইফস্টাইল’। এ জন্য আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অনেক গুরুত্ব দিই। করোনাকালে অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে; তারা নিজেদের আয় দিয়ে সংসারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমন নারীদের কথা আমরা লেডিস ক্লাবে তুলে ধরতে চাই। এমন সব উদ্যোক্তারা অনেকেই যুক্ত রয়েছে আমাদের ফেসবুক পেইজে।

আপামর জনসাধারণের কাছে পৌঁছতে পেরেছে বলেই হয়তো লেডিস ক্লাব এতটা জনপ্রিয় হয়েছে জানিয়ে প্রযোজক জাকিয়া বলেন, ‘এর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সানাউল্লাহ লাবলু ও অনুষ্ঠান প্রধান মহিউদ্দিন টিপুর প্রতি। তাঁরা অনুষ্ঠানটিকে সফল করতে ভীষণভাবে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেন। অনুষ্ঠানটির সঙ্গে সহ প্রযোজনায় রয়েছেন অমিত রায় ও মোহাম্মদ আবু আহসান। দুজনেই ওতোপ্রতোভাবে যুক্ত থেকে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। আর সঙ্গে রয়েছেন আমাদের টেকনিক্যাল টিম। নেক্সাস টেলিভিশনের পরিবেশ ভীষণভাবে নারীবান্ধব। তাই সকলের সহায়তায় স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কাজটি করে এগিয়ে যেতে পারছি।’