Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeআপনার সন্তাননবজাতকের বমির কারণ, সমাধানের উপায়

নবজাতকের বমির কারণ, সমাধানের উপায়

ডা. আবু সাঈদ শিমুল

শিশুর বমি নিয়ে বাবা-মা প্রায়ই উদ্বিগ্ন থাকেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা তেমন গুরুতর নয়। শিশুর পেট ভরে যাওয়ার পরও তাকে জোর করে বেশি দুধ খাইয়ে দেন অনেক মা। এ জন্য সে বমি করে।

আবার তারা যেহেতু মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না, তাই কিছু হলেই কান্না করে। গরম বা শীত লাগুক, মশা কামড়াক- যাই হোক না কেন তার বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ হলো কান্না। তবে মায়েরা সব কান্নাকেই শিশুর ক্ষুধা লেগেছে মনে করে। এতে জোর করে মুখের ভেতর স্তন পুরে দেয়। এর ফলাফল হলো বমি। অনেক সময় দেখা যায়, মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর বাড়ির অন্য লোকজন শিশুকে আদর করছে। বেশি আদর করতে গিয়ে কেউ কেউ ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করে। এতে শিশু বমি করে দেয়। এ জন্য বুকের দুধ খাওয়া শেষ হলে তাকে খাড়া কোলে রেখে পেটের বাতাস বের করে দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে।

জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যে শিশু পরিমাণে কম, পানির মতো ফেনা ফেনা বমি করে। এর কারণ নবজাতকের পেটে মায়ের পেটে থাকাকালীন সময়ের পানি থাকে। আর তা অনেক সময় জন্মের পরপর বমি করে বের করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক-দুইবার বমি করার পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। মায়ের দুধ খাওয়ানোর পর কোলে নিয়ে ঢেঁকুর তোলার সময় সুস্থ শিশুও কিছুটা দুধ বমি করে ফেলে। এটি গাল বেয়ে পড়ে যায়। এটি আসলে বমি নয়। শিশু মায়ের বুকের দুধ টানার সময় বাতাসও খেয়ে ফেলে, এই বাতাস পেট থেকে বের করার সময় কিছুটা দুধ তুলে ফেলে। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার।

অনেক সময় নবজাতক কোনো কারণে অতিরিক্ত কান্না করলে বমি করে ফেলে। এ ক্ষেত্রে শিশুর কান্না থামানোর চেষ্টা করতে হবে এবং কান্নার কারণ খুঁজতে হবে। এ ছাড়া পেটে গ্যাস জমে পেটব্যথা হলেও শিশু কান্না করে। এ সময় তাকে খাড়া কোলে রাখলে সামান্য বমি করে ফেলবে। এতে পেট থেকে বাতাস মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবে এবং কিছুটা শান্ত থাকবে। এ ক্ষেত্রে সিমেথিকন ড্রপ ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়ালে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়।

আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, কৌটা বা অন্য যে কোনো দুধ দেওয়ার পর শিশু বারবার বমি করছে। তাই ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ দিতে হবে।

কখন ভয়ের কারণ

# নবজাতক মায়ের দুধ না টানতে চাইলে বা অল্প টেনে বারবার বমি করলে, বমি লাল (রক্ত মেশানো) বা হলুদ (পিত্তরস মেশানো) বর্ণের হলে, সেই সঙ্গে শিশু নেতিয়ে পড়লে, জ্বর দেখা দিলে বা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কম/ বেশি হলে, পেট ফেঁপে ওঠলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

# এ ছাড়া কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মস্তিষ্কের চাপ বেড়ে গেলে, জন্মের পর শিশু না কাঁদলে, নবজাতকের ইনফেকশন বা নিওনেটাল সেপসিস কিংবা মস্তিষ্কে ইনফেকশন হলে, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার হলেও নবজাতকের বমি হতে পারে।

# সংখ্যায় খুব অল্প হলেও নবজাতকের পেটের অন্ত্রে কোনো জন্মগত ত্রুটির কারণে অন্ত্রের পথ আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে শিশু খাওয়ার পরপরই বমি করে দেয়। এই সকল ক্ষেত্রেই তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাতে হবে।

লেখক
শিশু বিশেষজ্ঞ
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments