সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
হার-ই-ট্রেডের যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সালে, কোভিডের সময়। মূলত কোভিডের সময় অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে এবং নারী উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার মানসিকতা থেকে শুরু এই ফেসবুক পেজটি। ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এখানে। বর্তমানে প্রায় ৪৩ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে এর।
এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মটি থেকে গত ৭ ও ৮ এপ্রিল ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ৬০ জন উদ্যোক্তার পণ্য নিয়ে হয়ে গেল প্রদর্শনী ও মেলা। ‘উৎসবে এবার দুই ধরন—ঈদ ও বর্ষবরণ’ এই শিরোনামে ‘হার-ই-ট্রেড’ এবার ষষ্ঠবারের মতো অফলাইন মেলার আয়োজন করল।
নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে তৈরি এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সভাপতি ওয়ারেছা খানম প্রীতি জানান, ঈদ ও বর্ষবরণ উপলক্ষে এই ধরনের মেলার আয়োজন আমরা আগেও করেছি। ব্যাপক সাড়া পাই মানুষের। আমরা চাই, কেবল দেশীয় পণ্য নিয়ে নিজেদের দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে। একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি রয়েছে, যারা এই ঐতিহ্যের সঙ্গে থাকে। আমরা তাদেরই ক্রেতা ও সহযোগী হিসেবে পাচ্ছি। তারা জানে, হার-ই-ট্রেড মানেই দেশীয় পণ্যের আয়োজন।
মেলা ঘুরে দেখা গেল, দেশীয় কাপড়ে তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে হোম ডেকর, গহনা ও খাবার-দাবারের স্টল রয়েছে এখানে। দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড়ও রয়েছে বেশ।
বিভিন্ন ধরনের টিপ ও হাতে তৈরি গহনা নিয়ে কাজ করেন নওরিন আক্তার। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘সারানা’। জানালেন, যেহেতু এখন করোনার ভয় অনেকটা কমেছে, মানুষ উৎসব উদযাপন করছে। আমরাও ভাবলাম মেলা করি। টিপের বিষয়টি হলো, অনলাইনে কেনা যায়, তবে সামনাসামনি দেখে কিনলে সাইজটা অনেক সময় বুঝতে সুবিধা হয়। মেলায় মানুষ দেখেশুনে কিনতে পারে। আবার যারা আমার পেজের নিয়মিত গ্রাহক, তারা মেলায় আসছে। আমাদের সামনাসামনি দেখা হচ্ছে, এটা একটি বড় বিষয়।
আমি যখন একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি, তখন বৃহৎ পরিসরে দ্রুতই যাওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে নওরিন আক্তার বলেন, ‘সেই ক্ষেত্রে হার-ই-ট্রেডের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের জন্য সহযোগী হিসেবে কাজ করে। একই ছাতার নিচে অনেক উদ্যোক্তা তাদের পণ্য নিয়ে জমাট হতে পারে। আর ক্রেতারাও নিজের পছন্দসই জিনিসটি দেখে কিনতে পারে।’
দেশীয় শাড়ি ও পোশাক নিয়ে কাজ করছেন আঁখি ভদ্র। তাঁর উদ্যোগ ‘ট্রিভো’। মেলায় ক্রেতাদের উৎসাহ নিয়ে জানান, হার-ই-ট্রেডের মেলা খুব জমজমাট হয়। কারণ, সবাই জানে প্রত্যেক উদ্যোক্তাই ভালো এবং সবাই এখানে তাদের মানসম্পন্ন পণ্যগুলো নিয়েই আসে। এখানে এলে প্রতিযোগিতাটা সব সময় হয় নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার। এটা খুবই ভালো বিষয়।
‘সামনে বাজেট আসছে। নিরাপদ শহর, ঋণ সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রণোদনার গল্প আমরা শুনি। অনেক সময় দেখা যায়, সেগুলো ঠিক মেলে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা নারী উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে, তারা উদ্যোক্তাদের আরেকটু সহযোগিতা করবে, প্রশিক্ষণ দেবে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে—এমনটাই আশা রাখি,’ বলছিলেন তিনি।
মেলার উদ্বোধনী দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ এবং প্রখ্যাত অভিনেতা, লেখক ও শিল্পী আফজাল হোসেন ও তার সহধর্মিণী তাজীন হালিম। সমাপনী দিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস। মেলা চলেছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।