অপরাজিতা অরু
শীতকালের কুয়াশাতে জড়িয়ে থাকে মায়া। এই মায়াকে উষ্ণতার ওম মিশিয়ে আরেকটু আপন করে নিতে দরকার পড়ে গরম কাপড়ের। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাই নিজেকে মানিয়ে নিতে এই সময়ে গায়ে জড়াতে হয় বিভিন্ন গরম কাপড়।
সোয়েটার, ব্লেজার কিংবা ডেনিম জ্যাকেটের সঙ্গে প্রতিনিয়ত হচ্ছে স্টাইল। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা ধরনের নতুন পোশাক। এত সব বাহারি পোশাকের ভিড়ে শীতের চাদরের আবেদন কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে।
কাশ্মীরি শাল কিংবা খাদি ব্যবহারের প্রচলন বহুকাল আগে থেকেই। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে দেশীয় চাদরের কদর। আধুনিক সব ফ্যাশনের বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে চাদরের জমিনেও ফুটে উঠছে নানা ধরনের নকশা। ফুল, পাখি, কাঁথার নকশা ছাড়াও গ্রামীণ দৃশ্য, বিভিন্ন কবিতার লাইনে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নানা ধরনের সংস্কৃতি। সেসব ডিজাইন যেকোনো বয়সের মানুষের সঙ্গে মানানসই। আপনি শাড়ি কিংবা পাঞ্জাবি যে পোশাকটাই পরুন, এই শীতে একটি চাদর হতে পারে মানানসই। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বাহ্যিক লুকেও ফুটে উঠবে আভিজাত্য ও ঐতিহ্য।
ঐতিহ্যের কথা বলতেই চোখে ভেসে উঠে পূর্বপুরুষদের সেইসব পুরোনো দিন। দাদী-নানী কিংবা মা-খালাদের গায়ে একটা শাল জড়ানো শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যা। রাজা জমিদার কিংবা অভিজাত শ্রেণির মানুষের চাদর জড়ানো পরিপাট্য।
ফ্যাশন হাউজ কে ক্র্যাফট এর সহকারী সাধারণ ব্যবস্থাপক নাসির আহমেদ জানালেন, ২৫ থেকে ত্রিশোর্ধ্ব প্রায় সব বয়সী মানুষই তাদের ক্রেতা। বিভিন্ন মোটিফের ডিজাইন কিনছেন তারা। কাঁথা স্টিজ, ফুল, কলকা, মানডালা আর্ট (ময়ূর), জামদানি, জ্যামিতিক নকশা শোভা পাচ্ছে সেসব চাদরে। একই সঙ্গে ফ্যাশন ও আভিজাত্য মিলছে।
ফ্যাশন হাউজ ট্রিভোর স্বত্বাধিকারী শ্রাবণী জলি বলেন, ‘কোমড় তাঁতে তৈরি চাদর বা শাল বেশ জনপ্রিয়। পাশাপাশি খাদি, খেশ, তাঁতে তৈরি এক রঙা চাদরগুলোতে এখন টাইডাই, ব্লক, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাচওয়াক, তুলি দিয়ে নানা ডিজাইন করে আরো আকর্ষণীয় করা হয়। এখনকার গায়ের চাদরগুলো দৈর্ঘ- প্রস্থে কম হওয়াতে পরিধানে স্বস্তি তো আছেই, তা ছাড়া যে কোনোভাবে ফ্যাশনটাও করা যায়।
ট্রিভো- এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী আঁখি ভদ্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশীয় হ্যান্ডলুম যত কাপড় রয়েছে সেসব নিয়েই তিনি কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশীয় ঐতিহ্য হ্যান্ডলুম চাদর বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাহাড়ি তাঁতে বোনা এসব উলের চাদরের বৈশিষ্ট্য হল, একই রকম ডিজাইনের মাত্র একটিই তৈরি হচ্ছে। যেহেতু হাতে বোনা তাই হুবহু একই রকমের দুইটি চাদর সম্ভব না। এই ভিন্নতাই খুব জনপ্রিয় হয়ে তরুণ ক্রেতাদের কাছে। হালকা থেকে ভারি শীতের জন্য এসব চাদরের দাম হাতের নাগালেই। তাই সহজেই দেশীয় তাঁতের এসব চাদর নিজের করে নিতে পারেন ক্রেতারা।
তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে দেশীয় ঐতিহ্য, তাঁত ও দেশী পণ্য এভাবেই বিস্তৃতি লাভ করুক শীত কিংবা গ্রীষ্ম যেকোনো ঋতুতে।