ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ
স্বাস্থ্য রক্ষার নানা বিষয় এখন গণমাধ্যমের প্রচেষ্টা ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় অনেকে জানছে। গ্রাম পর্যায়েও দাঁত ব্রাশ দেখা যায়। তবে প্রশ্ন ওঠে ব্রাশ ও পেষ্টের গুণগত মান ও ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে।
দাঁতকে সাদা করার জন্য কয়লা, ছাঁই বা বাজারের নানা রাসায়নিক পদার্থ যেমন দাঁতের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি শক্ত ব্রাশ বা অধিক সময় দাঁত ব্রাশ করাও প্রতিরক্ষা আবারণকে নষ্ট করে। প্রতিদিন সকালে নাস্তা ও রাতে খাবার পর দুই থেকে তিন মিনিট, দাঁতের সকল পৃষ্ঠ পরিষ্কার করার জন্য যথেষ্ট।
সাধারণত ব্রাশ নির্বাচনে ব্রাশের মাথা গোলাকার, ব্রিসেল ছোট ও নরম আর ধরার স্থানটি অমসৃণ ও সহজ হতে হবে, ব্রিসল সর্বোচ্চ এক ইঞ্চি লম্বা ও অর্ধ ইঞ্চি পাশ বা প্রস্থূ হলে সুবিধা। তিন থেকে চার মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন, কখনই একজনের ব্রাশ অন্য কারো ব্যবহার করা উচিত নয়। ব্রাশ নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে, যাতে পোকা মাকড় বা নোংরা কিছু না লাগে। টয়লেটের স্থান থেকে কমপক্ষে ৭ ফুট দূরে ব্রাশ রাখতে হবে আর প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে গরম পানি দিয়ে ব্রাশ ধুয়ে রাখা ভালো।
টুথপেষ্টের বিষয়ে ফ্লোরাইডযুক্ত বেছে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এ উপাদান ক্ষয়কে প্রতিরোধ করে দাঁত মজবুত করে। পেষ্টের মধ্যে অমশৃন বা দানাযুক্ত কিছু না থাকা ভালো; আর ব্রাশের সময় ফেনা ও পিচ্ছিল হতে হবে। বাজারে নানা ধরনের পেষ্ট পাওয়া যায়। কোনটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি আবার কোনটি মেডিকেটেড।
মাড়ি রোগ ও অতিসংবেদনশীলতা কমাতেও নানা ধরনের পেষ্ট রয়েছে। ব্রাশের ব্রিসলের তিনভাগের একভাগ পেষ্ট নিলেই যথেষ্ট। শিশুদের ক্ষেত্রে যতদিন সে কুলি করতে না পারে ততদিন পেষ্ট ছাড়াই নরম ব্রাশ বা সুতি কাপড় ব্যবহার করা উচিত।
দাঁতের গঠন, অবস্হান, শারীরিক রোগ ও বয়সের ওপর নির্ভর করে ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে ব্রাশের সঠিক নিয়ম জেনে নিতে হবে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় পেছনের বা মাড়ির দাঁতগুলো দাঁত ও মাড়ির সংযোগ স্থানকে কেন্দ্র করে মাড়ির দিকে আনুমানিক ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে ঘড়ির কাটার মতো ঘুরিয়ে, সামনের নিচের দাঁত নিচ থেকে উপরে, আর উপরের সামনের দাঁত উপর থেকে নিচে করে দাঁতের বাইরের ও ভিতরের পৃষ্ঠ পরিষ্কার করা কার্যকর। আর চর্বণে ব্যবহৃত পৃষ্ঠ সামনে পিছনে করে করা যেতে পারে।
যাদের দাঁতের ফাঁকে খাবার জমে তাদের অবশ্যই বাজারজাত ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ব্রাশের সঠিক ব্যবহার জেনে ব্যবহার করতে হবে। টুথপিক বা কোনো ধাতব কাঠি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দাঁত ব্রাশের পর আঙ্গুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসেজ ও ব্রাশ দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার রাখার বিষয়টিও নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টে ইনহেলার ব্যবহারকারী, কেমোথেরাপি চলছে, রক্ত স্বল্পতা, কিডনি রোগী তাদের চিকিৎসকের পরামর্শে জীবাণুমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। পোভিডন আয়োডিন মাউথ ওয়াশ করোনা ভাইরাসকে দমনের প্রমাণ মিলছে।
লেখক : চিকিৎসক, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা।
০১৯১১ ৩৮৭২৯১