শাশ্বতী মাথিন
সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুহারও। দেহের প্লাটিলেট কমে যাওয়া, চোখের পেছনে ব্যথা, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, র্যাশ ওঠা ইত্যাদি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ।
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবায়োটিক না থাকায় জ্বর ও ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ও তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে রক্তচাপ ঠিকঠাক রাখতে হয়। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এ সময় খাবার-দাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। না হলে পানিশূন্যতা, রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যা খেতে পারেন
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে তরল জাতীয় খাবার বেশি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি তো পান করবেই, পাশাপাশি ফলের রস, ডাবের পানি, মুরগির স্যুপ ও রঙিন সবজির স্যুপ খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। সহজ পাচ্য ধরনের খাবার খেতে হবে। যেমন : জাও ভাত, সাগু, নরম করে রান্না করা সবজি ইত্যাদি। এমন খাবার খাওয়াতে হবে যেন তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং রোগী পুষ্টি পায়- জানান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
ডেঙ্গু রোগীর তরল গ্রহণের বিষয়ে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের (চট্টগ্রাম) প্রধান পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ বলেন, ‘যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের আইভি ফ্লুইডের পাশাপাশি মুখে তরল খাবার দিতে হবে। এতে দেহের চাহিদা অনুযায়ী তরলের ভারসাম্য ঠিকঠাক থাকবে। অন্যদিকে যারা বাসায় থাকছেন, তাদের পানিসহ অন্যান্য খাবার মিলিয়ে তিন লিটার তরল গ্রহণ করতে হবে।’
ডেঙ্গুর সময় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। প্রোটিন সাধারণত পাওয়া যায় মাছ ও মাংসে। এ ক্ষেত্রে লো ফাইবারযুক্ত মাছ, যেমন- শিং, পাবদা, শোল ইত্যাদি এবং মুরগির মাংস দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবারেও প্রোটিন থাকে। তবে দুধে অনেকেরই হজমে সমস্যা বা ল্যাকটোজেন ইন্টলারেন্স হয়। এ ধরনের সমস্যা না থাকলে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে দুধও খেতে পারেন। এটি ভিটামিন বি-১২-এরও চাহিদা মেটাবে।
কেবল জ্বরের সময় নয়, ডেঙ্গু সেরে যাওয়ার পরও কিছুদিন খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রোটিন রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কলিজা, বীজজাতীয় খাবার, মাশরুম ইত্যাদি রাখতে পারেন। এগুলোও প্রোটিনের চমৎকার উৎস।
ডেঙ্গু হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেমন : কমলা, পাকা পেঁপে, আপেল, পেয়ারা, আমড়া, মাল্টা, সবুজ শাকসবজি, বাঁধাকপি, ব্রকলি ইত্যাদি। এগুলো শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে আয়রনজাতীয় খাবার। যেমন : গাঢ় সবুজ শাক, মিষ্টিকুমড়া, আনার, সামুদ্রিক মাছ, খেজুর, মটরশুঁটি ইত্যাদি। এগুলো রক্তস্বল্পতা কমাতে কাজ করে। এ সময় পেঁপে পাতার রস খেতে পারেন। এতে প্রদাহরোধী উপাদান রয়েছে। এটি শরীর ব্যথা কমাতে উপকারী।
যা খাবেন না
ডেঙ্গু হলে কিছু খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। আবার কিছু খাবার একদমই এড়িয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ মাহফুজা আফরোজ বলেন, ‘ডেঙ্গুতে গায়ে র্যাশ থাকলে অ্যালার্জি বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে গেলেই ভালো। যেমন : ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম, গরুর মাংস, বেগুন, চিংড়ি মাছ ইত্যাদি। জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া ও বমি হলে ডাল, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।’
এ সময় ভাজাপোড়া খাবার, ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড একদমই এড়িয়ে যাবেন। পাশাপাশি কোমল পানীয়, দুধ চা-কফি ইত্যাদিও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে দিন। এগুলো দেহে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। অনেকে একটু সুস্থ হয়ে উঠলে ভারী খাবার খাওয়া শুরু করেন। এটি একদমই করা যাবে না। এতে বদহজমসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়ে রোগী আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। আর জ্বরের সময় একেবারেই খালি পেটে থাকা যাবে না। অল্প অল্প করে বারবার খেতে হবে। এতে রোগী সবল থাকবে বলে জানান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে জ্বর-পরবর্তী ক্লান্তি ও দুর্বলতা থাকে অনেক দিন। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন জীবনে। তাই কেবল ডেঙ্গু জ্বর হলেই নয়, রোগ সেরে গেলেও খাবারের প্রতি নজর দিন। তবেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সহজ হবে।