Thursday, December 12, 2024
spot_img
Homeমন জানালাভালো লাগা— মন্দ লাগাডিপ্রেশনে ভুগছেন, কখন ও কীভাবে বুঝবেন?

ডিপ্রেশনে ভুগছেন, কখন ও কীভাবে বুঝবেন?

মো. জহির উদ্দিন

বাংলাদেশের পূর্ণবয়সী মানুষের মধ্যে ৪ দশমিক ৬ ভাগ বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনে ভুগছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এই রোগ প্রায় দ্বিগুণ। ডিপ্রেশনের রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী ৬৪ দশমিক ২ শতাংশ। বিষণ্ণতা এক ধরনের মানসিক রোগ। বিষণ্ণতার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো মন খারাপ হওয়া ও আগ্রহহীনতা; মনে কোনো আনন্দ-ফুর্তি না থাকা।
লক্ষণ
এ সময় মনে এক ধরনের ফাঁকা ফাঁকা অনুভূতি হয়। রোগী কোনো হবি বা শখের কাজ করতেও অনীহা প্রকাশ করে। সব ধরনের উদ্যোগই কমিয়ে দেয়। রোগী অপরাধ বোধে আক্রান্ত হয়। কেউ কেউ বিরক্তিতে আক্রান্ত হয়। তার মনে কোনো আশা থাকে না। নিজের পরিস্থিতির পরিবর্তনে তার কোনো কিছু করার নেই, এমনটা বিশ্বাস করে এবং সব উদ্যোগ ছেড়ে দেয়। নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবে। যৌন বিষয়সহ কোনো বিষয়েই তার কোনো আগ্রহ থাকে না। স্মরণশক্তি কমে যায়, মনোযোগ ক্ষমতাও কম থাকে। এতে ছাত্ররা পড়ালেখা ভালোভাবে করতে পারে না। সিদ্ধান্ত নিতেও কষ্ট হয়। ঘুম নষ্ট হয়ে যায় বা ঘুম বেড়ে যায়। খাওয়ার রুচি কমে যায় বা বেড়ে যায়। এতে শারীরিক ওজনের ওপর প্রভাব পড়ে। ক্লান্তি বাড়ে বা শরীর দুর্বল লাগে। মরে যাওয়ার চিন্তা আসে বা আত্মহত্যার চিন্তা আসে। কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টাও করতে পারে। কথা বলা, চলাফেরা কমে যায়। মানুষ ধীরগতির হয়ে পড়ে। শান্ত বসে থাকতে অসুবিধা বোধ করে অনেকে। এক ধরনের অস্থিরতা ঘিরে ধরে। হজমে অসুবিধা হতে পারে।
তবে এই লক্ষণগুলোর সব কিন্তু বিষণ্ণতার রোগীদের থাকে না। আবার এক/ দুটি লক্ষণ মিলে গেলেই নিজেকে বিষণ্ণতা রোগী ভেবে বসবেন না যেন। লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন ধরে থাকলে, অনেক তীব্র হলে, দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হতে শুরু করলে সম্ভবত আপনার বিষণ্ণতা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। এতে বোঝা যাবে, আপনার বিষণ্ণতাটি রোগের পর্যায়ে গেছে কি না।
কারণ
১. জীবনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি,
২. দ্বন্দ্বপূর্ণ পরিবার,
৩. অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা,
৪. ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য,
৫. বংশগত ও কিছু শারীরিক কারণসহ (মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের ক্ষরণের অস্বাভাবিকতা) বিভিন্ন কারণে বিষণ্ণতা হতে পারে।
বিষণ্ণ কখনো কখনো জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এক গবেষণায় আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে মানসিক রোগ পাওয়া গেছে। আত্মহত্যা চেষ্টাকারীদের মধ্যে যারা মানসিকভাবে অসুস্থ, তাদের মধ্যে ৭০ দশমিক ৭ ভাগ বিষণ্ণতা রোগে ভুগে থাকেন।
কেউ বিষণ্ণতায় ভুগছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের সবকটি সরকারি মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে এই রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। ওষুধের পাশাপাশি কথার চিকিৎসা বা সাইকোথেরাপি, বিশেষত কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করে।
লেখক : অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, সাইকোথেরাপি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments