অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন
স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতায় ইতোমধ্যে বাড়লেও জরায়ুমুখের ক্যানসার নিয়ে আলোচনা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার’ আইএআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৬ লাখ ৪ হাজার ১শ ২৭ নারী এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মারা যায় ৩ লাখ ৪১ হাজার ৮শ ৩১ জন।
রোগের ব্যাপকতা
আইএআরসি’র হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নারী ক্যানসার রোগীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জরায়ুমুখের ক্যানসার। আইএআরসি’র এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর জরায়ুমুখের ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮ হাজার ২শ ৬৮ জন নারী আক্রান্ত হয়। এটি নারীর ক্যানসারের প্রায় ১২ শতাংশ। মারা যায় ৪ হাজার ৯শ ৭১ জন।
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সস্টিটিউটের সর্বশেষ প্রকাশিত হাসপাতাল- ভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন প্রতিবেদন ২০১৮ থেকে ২০২০ অনুযায়ী নারীদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসারের স্থান দ্বিতীয় (১৪ দশমিক ৩ শতাংশ), স্তন ক্যানসার শীর্ষে (২৯ দশমিক ৩ শতাংশ)। নারী- পুরুষ নির্বিশেষে এর অবস্থান তিন নাম্বারে (১০ দশমিক ৯ শতাংশ)। সহজভাবে বলা যায়, প্রতি আট জন নারী রোগীর একজন জরায়ুমুখের ক্যানসারে ভুগছে।
ভাঙতে হবে অচলায়তন
জরায়ুমুখের ক্যানসার নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। রোগ প্রকাশে রয়েছে সংকোচও। সংকোচের বিহ্বলতা কাটাতে হবে আমাদের। তবে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ধর্মীয় কারণে প্রাণঘাতী এই রোগটি নিয়ে আলোচনা করাটাও অনেক ক্ষেত্রে দুঃসাধ্য।
অনেকে ভিতরে ভিতরে রোগটি পুষতে থাকে। লক্ষণ টের পেলেও পরিবারের সদস্যদের কাছে গোপন রাখে। শেষ পর্যায়ে যখন চিকিৎসার জন্য আসে, তখন করার তেমন কিছু থাকে না। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীদের প্রধান দুটি ক্যানসার স্থান অর্থাৎ স্তন ও জরায়ুর সুস্থতা নিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের বুঝাতে হবে, স্তন কিংবা জরায়ু একজন নারীর জন্য, একজন মায়ের জন্য লজ্জা বা সংকোচের কোনো বিষয় নয়। যে অঙ্গে মা তার সন্তানকে ধারণ করে, সেই জরায়ু, কিংবা জন্মের পর যে অঙ্গ থেকে সন্তানকে পুষ্টি যোগান, সেই স্তন বরং একজন মায়ের জন্য অহংকারের বিষয়। এর সুস্থতা নিয়ে নারীকে কথা বলার সাহস যোগাতে হবে। প্রতিটি পুরুষের দায়িত্ব জননীর, নিজের কিংবা তার সন্তানের, জরায়ুর সুস্থতা নিশ্চিত করা। জননীর কাছে জন্মঋণ স্মরণ করে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী, জননীর জন্য পদযাত্রা
নির্বাহী পরিচালক, সিসিইপিআর,বি
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম
সাবেক অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিউট ও হাসপাতাল