Sunday, February 16, 2025
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহননারী স্বাস্থ্যগর্ভাবস্থা ও প্রসবের সময় মাতৃমৃত্যু : কারণ ও করণীয়

গর্ভাবস্থা ও প্রসবের সময় মাতৃমৃত্যু : কারণ ও করণীয়

ডা. হালিদা হানুম আখতার

প্রতি বছর পাঁচ হাজারের ওপর মাকে আমরা গর্ভের কারণে হারাচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, এতোগুলো মাকে হারানোর বিষয়টি প্রতিরোধ করা যায়। এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য।সঠিকভাবে সেবা দেওয়া হলে মাকে আর মরতে হবে না।

মাতৃমৃত্যুর কারণ

অতিরিক্ত রক্তপাত

গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় জটিলতা হলো, অতিরিক্ত রক্তপাত বা হেমোরেজ। প্রসব হওয়ার সময় বা প্রসবের একটু আগে বা পরে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে, প্রায় ৩১ শতাংশ মা মারা যায়।

খিঁচুনি

মাতৃমৃত্যুর আরেকটি কারণ খিঁচুনি। প্রায় ২৫ শতাংশ মা এই কারণে মারা যায়। একে আমরা একলামসিয়াও বলি। এই সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়, প্রস্রাবের মধ্যে অ্যালবুমিন চলে আসে। সে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। এগুলোকে প্রি অ্যাকলামটিক টক্সিমিয়া বলে। গর্ভের কারণে যে টক্সিমিয়া হয়, এর জন্য এই জটিলতাগুলো হচ্ছে। জটিলতাটা হলো, খিঁচুনি। এর কারণে মা মারা যেতে পারে। তাঁঁর পেটের ভেতরের সন্তান, প্রসবের আগেও মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গর্ভপাতের জটিলতা

মাতৃমৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ হলো, গর্ভপাতের জটিলতা। কোনো মা গর্ভের সন্তান রাখতে না চাইলে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটে। সে গর্ভটি অপসারণের জন্য হয়তো বিভিন্ন জায়গায় যায়। প্রশিক্ষণ নেই, এই রকম ব্যক্তির কাছে যাচ্ছে, তখন সে কারণে মৃত্যু হচ্ছে। এই রকম মৃত্যুর সাত শতাংশ। একশ জন মা মারা গেলে সাতজন মারা যায় গর্ভপাতের জটিলতার কারণে।

অন্যান্য কারণ

এ ছাড়া ২০ শতাংশ মা অন্যান্য সমস্যার কারণে মারা যায়। যেমন : গর্ভধারণের কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে, হার্টের সমস্যা থাকলে, সেটা বেড়ে যেতে পারে। এসব কারণে মৃত্যুগুলো ঘটে। একে আমরা পরক্ষ্য কারণ বলি।

ক্যাপশন : মাতৃমৃত্যু প্রতিরোধে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ জরুরি। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : মাতৃমৃত্যু প্রতিরোধে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ জরুরি। ছবি : সংগৃহীত

করণীয়

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে অ্যান্টিনেটাল চেকআপ

গর্ভের সময় একজন মাকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে সেবা নিতে হবে। অন্তত চারটি অ্যান্টিনেটাল কেয়ার প্রয়োজন। এই সেবার মধ্যে থাকছে- তাঁর চেকআপ করা; তাঁর রক্তচাপের অবস্থা দেখা; তাঁর সন্তানটি গর্ভের বয়স অনুযায়ী বাড়ছে কি না সেটি দেখা; তাঁর অন্য কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, সেটি চেকআপ করা।

সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া

কোনো সমস্যা দেখা দিলে, যেমন- ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেলে, সে অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে। খিঁচুনির পূর্বাভাস দেখা দিলে, প্রস্রাবের মধ্যে অ্যালবুমিন আসলে চিকিৎসা নিতে হবে। অল্প রক্তচাপ, অ্যালবুমিন ধরা পড়লে চিকিৎসা দিয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব।

বাড়িতে প্রসব না করানোই ভালো

৫০ শতাংশ মা অ্যান্টিনেটাল কেয়ার নেওয়ার পর হাসপাতালে প্রসব হচ্ছে। অপরদিকে ৫০ শতাংশ মায়ের এখনো বাড়িতে প্রসব হয়। দাই বা আত্মীয়-স্বজন, প্রবীণ মানুষ হয়তো মায়ের প্রসব করাচ্ছে। তাদের হয়তো কোনো ধরনের আধুনিক প্রশিক্ষণ নেই। এতে শিশুটিকে টানা-হেঁচড়া শুরু হয়। শিশুটি কষ্ট পায়, পেটের মধ্যে মারা যায়। অথবা সে হয়তো বের হয়ে আসলো, কিন্তু ফুল বের হচ্ছে না। তখন হয়তো হাত দিয়ে খাঁমচি দিয়ে এটি বের করে আনা হয়। এতে মা রক্তপাত হয়ে মারা যায়। এসব জ্ঞান না থাকার কারণে বাড়িতে প্রসব হলে ২৮ শতাংশ মরা বাচ্চা হয়। তাই বাড়িতে প্রসব করানো যাবে না। আর করাতেই হলে একেবারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আনতে হবে। খুব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি বাড়িতে ডেলিভারি করাতে চাইবে না। সুতরাং যেখানে ডেলিভারি হয়, এমন জায়গায় চেকআপ বা অ্যান্টিনেটাল কেয়ার করতে হবে। সময়মতো সেখানে গিয়ে প্রসব করাতে হবে। তাহলে আমরা এই মাতৃমৃত্যু কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবো।

যে পরিবারের নারী সন্তানসম্ভবা সেখানে প্রত্যেকের একটি দায়িত্ব নিতে হবে, তাহলে মাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং শিশুকেও রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ডা. হালিদা হানুম আখতার
ডা. হালিদা হানুম আখতার

লেখক :
রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments