ডা. শাকিল মাহমুদ
গরমের দাবদাহে অতিষ্ট জনজীবন। গরমে পরিবেশের তাপমাত্রা অনেক উঠানামা করে। এতে মানুষের শরীরে, বিশেষ করে শিশুর শরীরে পিএইচ, বাফার সিস্টেমসহ অন্যান্য বায়োক্যামিক্যাল পেরামিটারের তারতম্য ঘটে।বিভিন্ন মেটাবলিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের জন্য গরমে শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে।
সুস্থ সবল শিশু আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের কর্ণধার শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সুস্বাস্থ্য জরুরি। যেহেতু তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই গরমে বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
গরমে শিশুর যেসব সমস্যা হয়
# গরমে শিশুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, টাইফয়েড, জন্ডিস, হেপাটাইটিস এ ও সি হতে দেখা যায়।
# শিশুর ত্বক যেহেতু নাজুক, তাই গরমে ত্বকে ঘামাচি, ছত্রাক, চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
# গরমে প্রচুর ঘাম হয়ে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হতে পারে। এতে পানি শূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পানিশূন্যতা থেকে কিডনি ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটে।
# অনেক সময় গরমে শিশুর বদ হজম হয়। শিশুরা ফাস্টফুড, বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করে। এসব খাবারে গরমের কারণে বিষক্রিয়া হতে পারে। ফুড পয়জনিং থেকে বদহজম হয়।
# এ ছাড়া গরমে ঘেমে ঠাণ্ডা-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, হালকা জ্বর আসা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হয়।
করণীয়
১. যেহেতু এখন করোনার সময় শিশুর ঠাণ্ডা-কাশি থাকলে অবশ্যই তাকে করোনার পরীক্ষা করাতে হবে।করোনা না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিহিস্টামিান, প্যারাসিটামল, সিভিট জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার দরকার নেই। কারণ, সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর এমনিাতেই পাঁচ থেকে সাত দিনের ভেতর ঠিক হয়ে যায়।
২. গরমে শিশুকে বাসায় তৈরি করা লেবুর শরবত, ফলের রস, প্রচুর পরিমাণ রসালো খাবার, সসা ও টকদই ইত্যাদি খেতে দিন।
৩. শিশুকে বাইরের খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ, এসব খাবারে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে।
৪. শিশুকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাহায্য করুন। খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৫. এ সময় যেহেতু পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও ফ্রেশ খাবার খাওয়াতে হবে। চা- কফি, কোমল পানীয়, সফট ড্রিংস ইত্যাদি খাওয়াবেন না। এগুলোতে ক্যাফেইন থাকার কারণে পানি শূন্যতা বেড়ে যায়।
৬. শিশুর ছায়ার ভেতরে রাখতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া শিশুকে ঘরের বাইরে বের করবেন না। হালকা রঙের জামা পরান।
৭. খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন ফ্রিজের খাবার সরাসরি না খায়। এতে ঠাণ্ডা, গলাব্যথার আশঙ্কা বাড়ে।
৮. শিশু ঘেমে গেছে কি না খেয়াল করুন। ঘেমে গেলে জামা পাল্টে দিন।