ফারজানা ফাতেমা (রুমী)
ক্লান্তি দূর করতে হলে প্রথমে খেয়াল করতে হবে, কী কারণে সমস্যাটি হচ্ছে। এখানে রোগী এবং তার পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডাক্তারের প্রশ্নের সঠিক উত্তর রোগ নির্ণয়ের জন্য জরুরি।
কিছু প্রশ্ন
১. সকালে ঘুম থেকে উঠলে রোগী কি সুস্থ বোধ করেন?
২. সারাদিনে ক্লান্তি কি বেড়ে যায়?
৩. ব্যক্তি কি অপ্রত্যাশিতভাবে ঘুমান বা দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পূর্ণ করার জন্য ক্যাফেইনের মতো অতিরিক্ত মাত্রায় উদ্দীপক গ্রহণ করেন?
৪. ক্লান্তি কি ধীরে ধীরে বা হঠাৎ আসে?
৫. এটা কি প্রতিদিনের ঘটনা, না কি মাঝে মাঝে হয়?
৬. কী করলে ক্লান্তি দূর হয় এবং কী করলে বাড়ে?
৭. ক্লান্তির কারণে রোগীর জীবন কীভাবে বদলেছে?
৮. ক্লান্তি কি শারীরিক থেকে মানসিক বেশি?
ক্লান্তির বিরুদ্ধে লড়াই যেভাবে করবেন
ঘুমের রুটিন
ক্লান্তির একটি সাধারণ কারণ পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যান এবং সকালে উঠুন। রাতে ঘুমের আগে কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
মেডিটেশন ও প্রার্থনা
কীভাবে রিলাক্সেজন মেডিটেশন বা শিথিলকরন করা যায়, তা জানুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি প্রাকৃতিক আরামদায়ক দৃশ্যের কথা ভাবুন। শান্তভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর ফোকাস করুন। নিয়মিত প্রার্থনা করুন। এতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হতে পারে।
ঘুমের ওষুধ
ঘুমের ওষুধ এড়িয়ে চলুন। এগুলো দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। কারণ, এগুলো অনিদ্রার সমস্যার সমাধান করে না৷
ধূমপান
সিগারেটের ধোঁয়ায় অনেক ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এ কথা জেনেও আমরা ছাড়তে পারি না। ধূমপায়ীদের সাধারণত অধূমপায়ীদের তুলনায় কম শক্তির মাত্রা থাকার অনেক কারণ রয়েছে। শরীরকে শক্তি তৈরি করতে অক্সিজেনের সঙ্গে গ্লুকোজকে একত্রিত করতে হবে, কিন্তু সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মনোক্সাইড রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
ব্যায়াম ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ
আমরা ভাবি, শুয়ে বসে থাকলেই বুঝি শরীর ভালো থাকে। তবে ধারণাটি সঠিক নয়। টেলিভিশন দেখা, কম্পিউটার ব্যবহার ইত্যাদি বসে থাকা কাজ কমিয়ে দিন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম রাতে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে। ব্যায়ামে অভ্যস্ত না হলে, স্থূল হলে, ৪০ বছরের বেশি বয়সী হলে কিংবা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসায় থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
মাদক
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন বা বিনোদনের জন্য ড্রাগ ব্যবহার ক্লান্তির জন্য দায়ী। এটি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক। এটি ছাড়তে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন।
কর্মক্ষেত্রে সমস্যা
কর্মক্ষেত্রের দ্বন্দ্ব ক্লান্তির একটি কারণ। কাজের সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিন। সমস্যা সমাধানের জন্য সহকর্মী কিংবা মানবসম্পদ অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার ডেস্কের পাশেই ১০ মিনিট হাটার ব্যাবস্থা রাখুন কিংবা ৫ মিনিট ডিপ ব্রিদিং অনুশীলন করে নিন।
কাউন্সেলিং সেবা
গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৫০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষের মাঝে ক্লান্তি প্রধাণত মনস্তাত্ত্বিক কারণে হয়। গবেষণায় প্রমাণিত যে কাউন্সেলিং থেরাপি বা জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি ক্লান্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেস বা চাপ প্রচুর শক্তি খরচ করে। মনে প্রশান্তি আনে এমন কাজ করার চেষ্টা করুন। হতে পারে জিমে ব্যায়াম করা, ধ্যান, যোগব্যায়াম, গান শোনা, বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।
জীবনযাত্রার মূল্যায়ন
আপনার জীবনযাত্রা কেমন তা পূণরায় ভাবুন। আপনি কি অপ্রয়োজনীয় চাপের মধ্যে আছেন? আপনার জীবনে কি চলমান সমস্যা আছে যা দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ বা বিষণ্নতার কারণ? পারিবারিক, কর্মজীবন বা ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ করুন।
নতুন কিছু করা
আধুনিক জীবনের একটি ত্রুটি হলো নিজেকে আরও উচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চাপ ৷ এই ব্যস্ততা মাঝেমাঝে ক্লান্তিকর। আড্ডা দেওয়ার জন্য সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা রাখুন, নতুন কিছু করুন।
প্রাণখুলে হাসুন
হয়তো আপনি কাজের চাপে এতটাই ব্যস্ত যে আপনি মজা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না। হাসি অন্যতম সেরা শক্তি বৃদ্ধিকারী। প্রিয়জনের সঙ্গে প্রাণখুলে হাসুন।
মধ্য দুপুরের ক্লান্তি
বেশিরভাগ মানুষ দুপুরের খাবারের পরে তন্দ্রা অনুভব করে। মধ্য-বিকেলের এই শক্তির মাত্রা হ্রাস মস্তিষ্কের সার্কাডিয়ান ছন্দের সঙ্গে যুক্ত। আপনার নিয়ন্ত্রিত জীবনধারাই এ থেকে মুক্তি দিতে পারে।