সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
২০১৮ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায় চট্টগ্রামের মেয়ে রুম্পি বড়ুয়ার দাদা। রুম্পির পরিবারের উপর্জনক্ষম মানুষ ছিলেন দুজন। বাবা ও দাদা। বাবার বয়স হয়ে গিয়েছিল, তাই দাদার মৃত্যুতে অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়ে রুম্পির পরিবার।
এই সময় রুম্পি চিন্তা করে, কীভাবে পরিবারকে সাহায্য করা যায়। এই ভাবনা থেকে বিউটিফিকেশন পেশায় আসা। বর্তমানে উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রি ল্যান্সিং করে মাসে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফ্রি ল্যান্সার রুম্পির সফলতার গল্প রইল পাঠকদের জন্য।
দাদার ইচ্ছা ছিল এই পেশায় আসি
সাজতে খুব পছন্দ করতাম। আবার কোনো অনুষ্ঠান হলে আমার পরিচিত আপুরা আমার কাছে সাজতে আসতো এবং তাঁরা সাজার পর আমাকে বলতো, ‘তুমি যে পার্লারের কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়ে এতো সুন্দর করে সাজাও, তুমি পার্লারের কাজ শিখলে আরো ভালো করবে। তুমি একটি প্রশিক্ষণ নাও।’ তবে তখনো বিউটিফিকেশনকে পেশা হিসেবে নেওয়া হয়নি।
তবে আমার দাদা, যদি ২০১৮ তে মারা গেছেন, তিনি চাইতেন আমি এই পেশায় আসি। এই পেশায় আসার ক্ষেত্রে আমার দাদার ভূমিকা অপরিসীম। আমার ভেতরে যে ইচ্ছেটা ছিল বিউটি আর্টিস্ট হওয়ার সে পথটা আরো সহজ করে দেয় সে। দাদা সবসময় বলতেন, ‘তোমার ভেতরে যে ইচ্ছাটা রয়েছে, একে কাজে লাগাও।’ দাদার মৃত্যুর পর পেশাটিকে সিরিয়াসলি নেওয়ার চিন্তা করলাম।
উজ্জ্বলায় বিউটিফিকেশন কোর্স করা
আমি বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উজ্জ্বলায় প্রথম কোর্সটি করি ২০২২ সালে। আর ২০২৩ সালে উজ্জ্বলা ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হওয়া ১০দিন ব্যাপী একটি কোর্সে অংশ নিই।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে উজ্জ্বলার কথা জানতে পারি। আমার একটি ফেসবুক আইডি রয়েছে সেই সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনাগোনা। একদিন হঠাৎ উজ্জ্বলার পেইজটি আমার চোখে পড়ে। পেইজটিতে ফলো দিয়ে রেখেছিলাম। তাদের কাজগুলো দেখতে থাকি। এগুলো দেখে আমার ইচ্ছা হয়, তাদের কাছ থেকে শেখার।
উজ্জ্বলায় কোর্স করার আগে আমি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে ছয় মাসের একটি কোর্স করেছিলাম। উজ্জ্বলার কোর্স করার পর আমি বুঝতে পারি, সেখানে তেমন কিছু শিখতে পারিনি। বিউটিফিকেশনে কাজ করার জন্য যে আত্মবিশ্বাস দরকার, সেটি তৈরি করে দিয়েছে উজ্জ্বলা। আমি আমার কাজের মাধ্যমে ক্লাইন্টদের সন্তুষ্ট করতে পারি। বর্তমানে ফ্রি ল্যান্সিং বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করে মাসে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছি।
কৌশলী হলে ফ্রি ল্যান্সিং করে ভালো আয় হয়
বিউটিফিকেশনে ফ্রি ল্যান্সিং করে ভালো আয় করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। ফ্রি ল্যান্সারদের অনেক টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হয় না। কাজ ভালোভাবে জানা থাকলে নূন্যতম পুঁজি দিয়ে ভালো আয় হয়। ধরুন, আপনার কাছে এই মুহূর্তে দুই হাজার টাকা রয়েছে। আপনি এমন একটি পন্য কিনুন, যেটি দিয়ে তিন থেকে চার গুণ লাভ হয়। হয়তো আপনি রিবন্ডিং ভালো করতে পারেন, তাহলে রিবন্ডিংয়ে ব্যবহার হয় এমন পন্য কিনুন । একটি পন্য দিয়েই কিন্তু তিনজনের কাজ করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাহলে কম পুঁজি দিয়ে বেশি আয় হলো। এরপর ওই আয়ের টাকা দিয়ে আরো পন্য কিনে নিজের কাজের মাধ্যম বাড়ান। এভাবে একটা সময় ক্লাইন্টও ভালো পাবেন, আয়ও বাড়বে। কাজ ভালো জানা ও কৌশলী হওয়া দুটোই সফলতার মূলমন্ত্র।
কাজ শুরু করার সময় আমার পুঁজি ছিল পাঁচ হাজার টাকা। বর্তমানে নিজের যেই আয় হয়, তা দিয়ে নিজের ও বাবার পরিবারের অনেকটা খরচই বহন করছি।
আমার স্বামী কর্মসূত্রে বিদেশে থাকে। আমিও হয়তো সেখানে চলে যাবো। ইচ্ছা রয়েছে বিদেশে গিয়ে নিজের একটি বিউটি স্যালন দেবো এবং অন্যান্য মানুষের কর্মসংস্থানেও সহযোগিতা করবো।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিল ৮৮তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭