Friday, June 9, 2023
Homeঅন্যান্য‘কারাগারের রোজনামচা’র আলোকে বঙ্গবন্ধু (পর্ব- ২)

‘কারাগারের রোজনামচা’র আলোকে বঙ্গবন্ধু (পর্ব- ২)

অধ্যাপক শরিফা রাজিয়া
৬ দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে আইয়ুব সরকার ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করে রাখে। কারণ, ৬ দফার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পূর্ববাংলার জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন কতটা বৈষম্যের শিকার তারা। রক্তচোষার মতো পূর্ববাংলার অর্জিত সম্পদ লুটে নেয় শোষকরূপী শাসকগোষ্ঠী। উন্নত হয় পশ্চিম পাকিস্তান; বঞ্চিত হয় পূর্ববাংলার জনগণ। তাদের জীবন দারিদ্র্য থেকে দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যায়। তীব্র প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে জনতা। চারিদিকে চলছে মিছিল, মিটিং। ৭ই জুন ঘোষণা করা হয় হরতাল কর্মসূচির। ভীতু আইয়ুব সরকার আন্দোলনকে প্রতিহত এবং ৭ই জুনের হরতাল কর্মসূচি বানচাল করার লক্ষ্যে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, চলছে গ্রেফতার, গুলি। কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু অস্থির হয়ে উঠেন। তিনি দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘আজ আর লেখাপড়ায় মন দিতে পারছি না। কি হবে বাইরে, কর্মীদের কি অবস্থা, অত্যাচার ও গ্রেপ্তার সমানে চলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর। দিন ভরই ছটফট করতে লাগলাম।’(৩রা জুন ১৯৬৬।। শুক্রবার, পৃ.৫৮,৫৯ কারাগারের রোজনামচা)

বঙ্গবন্ধু সবসময় গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। পাকিস্তান সরকার ক্রমাগত দমন পীড়ন চালিয়ে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা তিনি উপলব্ধি করলেন। দমন পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে আইনে সংশোধনীও আনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু লিখেন, “খবরের কাগজ এসে গেল- দেখে আমি শিহরিয়া উঠলাম, এদেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ চিরদিনের জন্য এরা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে! জাতীয় পরিষদে, ‘সরকারী গোপন তথ্য আইন সংশোধনী বিল’ আনা হয়েছে। কেউ সমালোচনামূলক যে কোনো কথা বলুন না- কেন মামলা দায়ের হবে। ডিপিআর তো আছেই, সিকিউরিটি অব পাকিস্তান আইন তো আছেই। এ ছাড়া ১২৪ ধারাও আছে।
বক্তৃতা করার জন্য, ১২৪ ধারা ৭(৩) (ইস্ট পাকিস্তান স্পেশাল পাওয়ার অর্ডিন্যান্স) এবং ডি পি আর রুল দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মোটমাট পাঁচটি মামলা আর অন্যান্য আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।”(৪ঠা জুন ১৯৬৬।। শনিবার, পৃষ্ঠা – ৬১, কারাগারের রোজনামচা)

পাকিস্তান সরকার শুধু আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, সংবাদপত্রের স্বাাধীনতাও হরণ করেছে। ৭ই জুনের হরতাল সম্পর্কে যেনো কোনো খবর ছাপাতে না পারে তার জন্য হুকুম জারি করেছে। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “ইত্তেফাক দেখে মনে হলো ৭ই জুনের হরতাল সম্বন্ধে কোনো সংবাদ ছাপাতে পারবে না বলে সরকার হুকুম দিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে আরও হুকুম দিয়েছিল, ‘এক অংশ অন্য অংশকে শোষণ করেছে এটা লিখতে পারবা না। ছাত্রদের কোনো নিউজ ছাপাতে পারবা না। আবার এই যে হুকুম দিলাম তাও ছাপাতে পারবা না।’ ” (৪ঠা জুন ১৯৬৬।। শনিবার পৃ- ৬২, কারাগারের রোজনামচা)

প্রবল আন্দোলনে উত্তাল জনতা। আইয়ুব সরকার জেল জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ৬ দফার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু এর ফল অশুভ। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু লিখেছেন’, “আমার ভয় হচ্ছে এরা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির দিকে নিয়ে যেতেছে। আমরা এ পথে বিশ্বাস করি না। আর এ পথে দেশে মুক্তিও আসতে পারে না। কিন্তু সরকারের এই নির্যাতনমূলক পন্থার জন্য এদেশের রাজনীতি ‘মাটির তলে’ চলে যাবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের পথে দেশের মঙ্গল করতে চাই, আমাদের পথ বন্ধ হতে চলেছে। এর ফল যে দেশের পক্ষে কি অশুভ হবে তা ভাবলেও শিহরিয়া উঠতে হয়! ‘কথায় আছে অন্যের জন্য গর্ত করলে, নিজেই সেই গর্তে পড়ে মরতে হয়।’”(৪ঠা জুন ১৯৬৬।। শনিবার, পৃ.৬২, কারাগারের রোজনামচা)

এ যেনো বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা নিজেদের খোঁড়া গর্তে পড়ে নিজেরাই নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তাই ত্যাগী জনগণের ওপর পাক সরকারের যতই দমন নিপীড়ন নেমে আসুক, অধিকার আদায়ে তা কখনো পিছপা হবে না। এই ত্যাগের বিনিময়ে পরবর্তী প্রজন্ম নিশ্চয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। তিনি লিখেছেন, ‘ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে যেতে নাও পারি, তবে ভবিষ্যৎ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে।’(৬ জুন ১৯৬৬।। সোমবার, পৃষ্ঠা-৬৮ কারাগারের রোজনামচা।)

মানসিক নির্যাতন করতে বঙ্গবন্ধুকে কখনো রাখা হয়েছে নির্জন কারাগারে একাকী। কিন্তু তার মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি পাক সরকার। নিজের চেয়ে সহকর্মীদের বিপদাশঙ্কায় তিনি চিন্তিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু দিনলিপিতে লিখেছেন, ‘আমি একা থাকি, আমার সাথে কাহাকেও মিশতে দেওয়া হয় না। একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভূক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা। এক একজনকে আলাদা আলাদা জেলে নিয়ে কিভাবে রেখেছে?’ ( ৬ই জুন ১৯৬৬।। সোমবার, পৃ.-৬৮ কারাগারের রোজনামচা)”।

৭ই জুন। পাক সরকার আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পুলিশের বেপরোয়া গুলি বর্ষণে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। কারাগারের প্রকোষ্ঠে বসে বঙ্গবন্ধু প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির হলেন। তিনি লিখেছেন, ‘সমস্ত দিনটা পাগলের মতোই কাটলো আমার। তালাবদ্ধ হওয়ার পূর্বে খবর পেলাম নারায়ণগঞ্জ, তেজগাঁ, কার্জন হল ও পুরানা ঢাকার কোথাও কোথাও গুলি হয়েছে, তাতে অনেক লোক মারা গেছে।’ (৭ই জুন ১৯৬৬।।মঙ্গলবার, পৃ.-৭০ কারাগারের রোজনামচা)

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জেগে উঠেছে এ দেশের মানুষ। শোষণ বঞ্চনা নিপীড়নের রূপরেখা জনগণের কাছে আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তাই আইয়ুব সরকারের এতো নির্যাতন সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি উপলদ্ধি করলেন জয় এবার সুনিশ্চিত। লিখলেন,
“মনে শক্তি ফিরে এল এবং আমি দিব্যচোখে দেখতে পেলাম ‘জয় আমাদের অবধারিত’। কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।” ( ৭ই জুন ১৯৬৬।। মঙ্গলবার, পৃ.-৭০ কারাগারের রোজনামচা।)

এখানে বঙ্গবন্ধুর ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। ৬ দফা আন্দোলনকে ঘিরে নির্যাতন চরমে পৌঁছালো। শত শত আহত নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। অন্যায়ভাবে তাদের সাজা দেওয়া হলো। ছোট ছোট শিশুরাও রেহাই পায়নি তাদের নির্যাতন থেকে। বঙ্গবন্ধু প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হলেন। বললেন, ‘বাধ্য হয়ে জেল কর্তৃপক্ষকে জানালাম, অত্যাচার বন্ধ করুন। তা না হলে ভীষণ গোলমাল হতে পারে।’(৮ই জুন ১৯৬৬।। বুধবার, পৃ.-৭১- কারাগারের রোজনামচা।)

জনগণই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রাণ। তাদের অধিকার আদায়ের জন্যই তার এ নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম, কারাবরণ। আন্দোলনরত জনতার ওপর গুলি বর্ষণে যারা নিহত হলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁদের প্রতি প্রচণ্ডভাবে আবেগপ্রবণ হলেন। তাঁদের অসহায় পরিবারের কথা ভেবে তিনি ভীষণ ভেঙ্গে পড়লেন। লিখেছেন, ‘যারা মারা গেল তাদের ছেলেমেয়ে, মা-বাবা তাদের কি হবে? কত আশা করে তারা বসে আছে, কবে বাড়ি আসবে তাদের বাবা। কবে আসছে তাদের ছেলে। রোজগারের টাকা আসবে মাসের প্রথম দিকে। এরা জেলে বন্দি সহসা আর ফিরে যাবে না, টাকাও আর পৌঁছবে না সংসারে। একথা ভেবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছি আমি।’ (৮ই জুন ১৯৬৬।। বুধবার, পৃ.-৭৩ কারাগারের রোজনামচা।)

কিন্তু তিনি নিশ্চিত হলেন, আর কোনোদিন সরকার এ দেশের মানুষকে শোষণ করতে পারবে না। নিজের অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন কখনও বৃথা যেতে পারে না। অসম্ভব দৃঢ় প্রত্যয়ী বঙ্গবন্ধু লিখেন, ‘তবে এদের ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই দেশের মানুষ তার ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য যখন জীবন দিতে শিখেছে তখন জয় হবেই, কেবলমাত্র সময় সাপেক্ষ। শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কৃষকরা কাজ বন্ধ করেছে। ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্ররা স্কুল কলেজ ছেড়েছে। এত বড় প্রতিবাদ আর কোনোদিন কি পাকিস্তানে হয়েছে?

ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি- পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণী যে আর পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরীব জনসাধারণকে শোষণ বেশিদিন করতে পারবেনা, সে কথা আমি এবার জেলে এসেই বুঝতে পেরেছি।’(৮ই জুন ১৯৬৬।। বুধবার, পৃ.-৭৩ কারাগারের রোজনামচা)
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেন বাঙালি বীরের জাতি। এ জাতি পরাশক্তির কাছে কখনো মাথা নত করেনি। যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। অধিকার আদায়ে বাঙালির যে আত্মত্যাগ তা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। কারণ, এ দেশের মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য আন্দোলন করে বুকের রক্ত দিয়ে ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য যেভাবে এদেশের ছাত্র-জনসাধারণ জীবন দিয়েছিল তারই বিনিময়ে বাংলা আজ পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। রক্ত বৃথা যায় না।’(৮ই জুন ১৯৬৬।। বুধবার, পৃ.-৭৩,৭৪, কারাগারের রোজনামচা)

নির্যাতনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি আরও দৃঢ় প্রত্যয়ী হলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন, ‘এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেব না, সংগ্রাম চালিয়ে যাবো, যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ ত্যাগের দাম দেয়। ত্যাগের মাধ্যমেই জনগণের দাবি আদায় করতে হবে।’(৮ই জুন ১৯৬৬, বুধবার, পৃ.-৭৪ কারাগারের রোজনামচা।)
দিনলিপিতে উঠে এসেছে তৎকালীন সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের চিত্র। কীভাবে পূর্ববাংলাকে দিনের পর দিন শোষণ করে ধ্বংস করা হচ্ছে। তৎকালীন কুমিল্লা জেলার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কাছে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় বহু লোক আহত ও নিহত হয়েছে। অথচ এর মূল কারণ রেলখাতে পাক সরকারের চরম অবহেলা। পূর্ব বাংলার রেল লাইনগুলো ব্রিটিশ আমলের, নেই মেরামত। পূর্ব বাংলার ভালো ভালো ইঞ্জিন ও বগিগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু লিখেন, ‘ভারতবর্ষ যখন ভাগ হয় এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র যখন কায়েম হয় তখন রেলওয়ের ক্ষতিপূরণ পাওয়া গিয়েছিল সংখ্যানুপাতে। পূর্ব বাংলা টাকা বেশি পেয়েছিল ভাগে। দুঃখের বিষয়, যতদুর পশ্চিম পাকিস্তান রেলওয়ের উন্নতি হওয়া প্রয়োজন ছিল তাহা করে নিয়ে পূর্ব বাংলার রেলওয়ে আলাদা করে প্রদেশের হাতে দেওয়া হলো। সেই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কি দেওয়া হয়েছে? ভাল ভাল ইঞ্জিন ও বগিগুলি পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে নেওয়া হয়।’ (১১ই জুন ১৯৬৬।। শনিবার, পৃ.-৮২ কারাগারের রোজনামচা)

বৈষম্যমূলক আচরণের ভয়ানক নজির উঠে এসেছে সিলেটে। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, ঝড়ে মানুষের মৃত্যু ও জনপদের ধ্বংস লীলায় সরকারের চরম অবহেলার চিত্র। এ অবস্থায় অসহায় মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার নির্মম প্রবণতা। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সিলেটের বন্যায় দেড়লক্ষ লোক গৃহহীন। ১০ জন মারা গেছে। কত যে গবাদি পশু ভাসাইয়া নিয়া গেছে তার কি কোনো সীমা আছে! কি করে এ দেশের লোক বাঁচবে তা ভাবতেও পারি না। তার উপর আবার করের বোঝা।’ (১৩ই জুন ১৯৬৬।। সোমবার, পৃ.-৮৭ কারাগারের রোজনামচা)

১৯৬৬-৬৭ সালের বাজেটের ক্ষেত্রেও তৎকালীন সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ দেখা যায়। যে বাজেট পেশ করেছে তাতে সাধারণ দরিদ্র মানুষের দুর্দশা বাড়িয়ে কেবল শিল্পপতিদের ১৯৭০ সাল পর্যন্ত “ট্যাক্স হলিডে” ভোগের ব্যবস্থা রেখেছে। তা ছাড়া পূর্ব বাংলাকেও বঞ্চিত করার নীলনকশা তৈরি করেছে। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সরকার ক্রমাগত কর ধার্য্য করিয়া জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশা বাড়াইয়া চলিয়াছেন। শোয়েব সাহেব অর্থনীতিতে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করিয়া চলিয়াছেন। তার বাজেটে এই শিল্পপতিদের ১৯৭০ সাল পর্যন্ত “ট্যাক্স হলিডে” ভোগের ব্যবস্থা রাখিয়াছেন। কিন্তু গরিব জনসাধারণ বোধ হয় আর আলো জ্বালাইয়া রাতের খাবার খেতে পারবে না। খাবার জন্য কিছুই থাকবেও না। দেশ রক্ষা খাতে যে শতকরা ৬৫ ভাগ ব্যয় করা হবে এর মধ্যে পূর্ব বাংলা কতটুকু পাবে? ৫/১০ ভাগ এর বেশি নিশ্চয়ই না।’ (১২ই জুন ১৯৬৬।। রবিবার, পৃ.-৮৫ কারাগারের রোজনামচা)

চলবে..

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, কুমুদিনী সরকারি কলেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments