সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
উজ্জ্বলা লিমিটেড, বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। উদ্যোক্তাদের যোগ্য করে তুলতে অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিংয়ের সব খুঁটিনাটি শেখানো হয় এখানে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজ রইল ১৩তম পর্ব।
পর্ব ১৩ : ফারজানা রহমান
পাখির মতো উড়তে ভালোবাসতেন মেয়েটি। একদম ডানপিটে স্বভাব। বন্ধুবান্ধবরা তাকে টমবয় বলে ডাকতো। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন- জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। আবার রং-তুলি হাতে নিয়ে ক্যানভাসে আঁকছেন ছবি।
আঁকাআঁকির সখ থেকেই আবার পোশাকে করছেন নকশা। পরিবারের সবার পোশাকে নকশা একাই করে দিচ্ছেন। খুলেছিলেন বুটিকশপও। পাশাপাশি উজ্জ্বলা থেকে বিউটিফিকেশনের উপর কোর্সও করেছেন। বাড়িতেই তৈরি করেছেন স্টুডিও। কিছু নিয়মিত ক্লাইন্ট আছে, যারা সবসময় সাজে তাঁর কাছে। আবার চট্টগ্রামের স্থানীয় সিটিভিতেও উপস্থাপনা করতেন।

এত প্রাণচঞ্চল মেয়েটিকেও যেতে হয়েছে এক ভীষণ বিষাদের ভেতর দিয়ে। বিয়ের পর খুব দ্রুতই সন্তান কনসিভ করেন। সন্তানের জন্ম, তার দেখভাল, সংসার সামলানো, নিজের পছন্দের কাজগুলো না করতে পারা, তাকে তীব্র বিষণ্ণতার মধ্যে নিয়ে যায়। জানান, বেশিরভাগ শিক্ষিত মেয়েদের ক্ষেত্রে কাজ করতে না পারলে একটি ভীষণ মানসিক যন্ত্রণা কাজ করে। কেবল সন্তান লালন-পালন করছি, মেহমান খাওয়াচ্ছি- সব ভালো। তবে এরপরও দিন শেষে একটি নিসঙ্গতা থেকে যায়। আমার গাড়ি-বাড়ি সব রয়েছে। অনেকেই হয়তো বলবে এত কিছু থাকার পরও কেন কাজ করতে চাও? আসলে আত্মপরিচয় তৈরি করার ক্ষুধাটা মারাত্মক। এই ক্ষুধা যতক্ষণ পর্যন্ত মিটবে না ততক্ষণ সবকিছু থাকার পরও নিজেকে হীন লাগবে।
এ সময় আমার হাতটি ধরেছিলো উজ্জ্বলা। উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপা আমাকে বলেন, ‘তোমাকে সবকিছু একসঙ্গে সমন্বয় করতে শিখতে হবে।
তোমার পরিবারও ঠিক রাখতে হবে। পাশাপাশি তোমাকে নিজস্ব একটা অস্তিত্বও গড়ে তুলতে হবে। সংসার করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব হারালে চলবে না। আবার নিজের অস্তিত্ব দেখতে গিয়ে স্বার্ধপর হয়ে সংসারকে ফেলে দিলে চলবে না।ধৈর্য ধরে কৌশলী হয়ে সব মেনটেইন করে এগোতে হবে।’
এ কথায় উজ্জীবীত হয়ে আবার কাজ করতে শুরু করেন ফারজানা। শুরুতে সবকিছু সামলে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবে এখন সব নিয়ন্ত্রণে। খুব আনন্দের সঙ্গে জানান- এখন আমি আবার ক্যানভাস হাতে। কোথায় আঁকছি? শ্বশুর বাড়িতেই আঁকছি। নিজের ছবি বিক্রি করছি। বাড়ির দেয়ালে আমার ছবি। আমার শ্বশুরকে উপহার হিসেবে দিই। এ ছাড়াও পোশাকে নকশা, ক্লাইন্টকে সাজানোর কাজও করছি। আমার স্বামী আমাকে খুব ছোট ছোট বিষয়ে সাহায্য করে, এটা আমাকে মুগ্ধ করে। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমার প্রশংসা করে।

তবে কোভিডের সময়ে কোনো ক্লাইন্ট ছিলো না জানিয়ে ফারহানা বলেন, ‘এক বছর খুব বাজে একটা সময় পার করেছি। উজ্জ্বলার চেয়ারপারসন আদিত্য সোম দাদা বিজনেস ম্যানেজমেন্টের একটি কোর্স করিয়েছিলেন। এতে আমি খুব উপকৃত হই। বুঝতে পারি কীভাবে কঠিন সিচুয়েশনটা সামলাবো।’
উজ্জ্বলা আমাকে শিখিয়েছে কঠিন পরিস্থিতি সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল। উজ্জ্বলার প্রতি কৃতজ্ঞতা। এভাবেই নিজের কাজগুলো করে যেতে চাই। নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে চাই- জানান তিনি।