– শাশ্বতী মাথিন
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাস যে এক অজানা, অদৃশ্য শত্রু, এটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বাঁচতে হলে চাই স্বাস্থ্যজ্ঞান। বাড়ানো চাই শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা; প্রতিদিনের জীবনযাপন হওয়া চাই বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। করোনাকালে সুস্থ থাকতে কিছু পরামর্শ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাকিল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে সুস্থ থাকতে সচেতনতা জরুরি। আসলে আতঙ্কিত হওয়া কখনো কখনো উপকারী। আতঙ্কিত হয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়ে গেলে কিন্তু ভালো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯-এর এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা নেই। তাই একমাত্র পথ হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। ’
ডা. মো. শাকিল মাহমুদের পরামর্শগুলো হলো :
১. প্রতিদিনের জীবনযাপনে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। রোজ কয়েকবার অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। সব সময় ব্যাগে বা পকেটে সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখবেন। প্রয়োজনমতো এটি ব্যবহার করতে হবে। আপনি যেখানেই যান না কেন, এই বস্তুটিকে জীবনের একটি অংশ বানিয়ে নিতে হবে।
২. এ মুহূর্তে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাস্ক। যেহেতু এই ভাইরাসটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই মাস্ক আপনাকে এ থেকে রক্ষা করবে। ইতালির একদল গবেষক জানিয়েছেন, বাতাসে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তাই মাস্ককে অবশ্যই আপনার সঙ্গী করা জরুরি।
৩. হ্যান্ড গ্লাভসকেও বানাতে হবে জীবনের অংশ। কেন? ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজে ঘরের বাইরে বের হয় প্রায় সবাই। নিজের অজান্তে বিভিন্ন জীবাণুযুক্ত জিনিস স্পর্শ করা হয়ে যায়। বিশেষ করে পাবলিক পরিবহনের হ্যান্ডেল, বাসের সিট, রিকশার হুড ও সিট, অফিসের চেয়ার-টেবিল, ল্যাপটপ, মোবাইল, কম্পিউটার, বাজারের ব্যাগ যত্রতত্র স্পর্শ করতে হয়। তাই নিরাপদ থাকতে প্রতিদিনের জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন। বাইরের যে জিনিসই স্পর্শ করা হোক না কেন, হ্যান্ড গ্লাভস পরে স্পর্শ করবেন।
৪. এ সময় কেনাকাটা, বাইরে খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি অভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। কেনাকাটা করতে গেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, গ্লাভস ও মাস্ক পরে, ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষিত হয়ে বাজার যান। কম সময়ের ভেতর বাজার সেরে ফেলতে পারলে ভালো। এ ক্ষেত্রে কী কিনবেন, তার লিস্ট আগে থেকে তৈরি করে রাখতে পারেন।
৫. শরীরচর্চার বিষয়টিতেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যেহেতু করোনার সময় জিমে যাওয়া যাচ্ছে না, অথবা বাইরে বের হয়ে ব্যায়াম করা যাচ্ছে না, তাই অনেকেই ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়ছেন। আর ওজন বেড়ে যাওয়াই মানে হলো বিভিন্ন রোগব্যাধি আমন্ত্রণ জানানো। তাই শরীরচর্চার বিষয়টি অবহেলা না করাই ভালো।
৬. দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে এই ক্রান্তিকালে। যে খাবারই খান না কেন, পুষ্টির বিষয়টিতে খেয়াল করুন। এমন খাবার বেছে নিন, যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ভিটামি-সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন লেবু, কমলা, আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। খাদ্যের গুণগত মান ও পুষ্টিগুণ যেন ঠিক থাকে, এভাবে রান্না ও পরিবেশন করতে হবে। এই সময় বাইরের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
৭. শরীরের পাশাপাশি মনেরও যতœ নেওয়া জরুরি। যেহেতু বেশির ভাগই লকডাউনে সময় কাটাচ্ছেন, এতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। সময়টাকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, যার যার ধর্ম অনুসারে প্রার্থনা, বই পড়া ইত্যাদি করতে পারেন। শিখতে পারেন নতুন কিছুও; হোক সেটা ইংলিশ স্পোকেন কোর্স, রান্না বা বাগান করা।