Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeআপনার সন্তানকরোনাকাল ও শিশুর ডিভাইস আসক্তি : সমাধানের উপায়

করোনাকাল ও শিশুর ডিভাইস আসক্তি : সমাধানের উপায়

অনন্যা চৈতী
সাধারণ অর্থে আসক্তি হলো নেশা, যেটা না পেলে মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিসিয়ান থেকে বলা হয়েছে, দুই থেকে চার বছরের একটি শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টা এবং পাঁচ বছরের বড় শিশুরা দুই ঘণ্টার বেশি ডিভাইস ব্যবহার করলে একে ডিভাইস আসক্তি বলা হচ্ছে।

এ ছাড়াও ডায়াগোনসটিক অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল হেলথ-এ বলা হয়েছে, শিশুর স্ক্রিন থাকা এখন কোকেন, অ্যালকোহল, স্মোকিংয়ের মতোই আসক্তি তৈরি করে ফেলছে।

শিশুর ডিভাইস আসক্তি বিষয়ে কথা হয়, সাইকোলজিস্ট ও বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সংগঠনের আজীবন সদস্য ফারজানা ফাতেমা রুমীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘করোনার এই সময়টাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিশুরা ডিভাইসের ব্যবহার বেশি করছে। কারণ, জুমে, গুগল মিটে, ম্যাসেঞ্জারে তাদের নিয়মিত ক্লাস করতে হয়। পাঁচ বছরের একটি শিশুও এখন ডিভাইসের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। যদিও লকডাউনের প্রথমদিকে বলা হচ্ছিলো, শিশুরা যেন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে। এতে সামাজিক বন্ধনে কোনো দূরত্ব তৈরি হবে না। তবে অনেক শিশুকেই দেখা যায়, সারাদিন ডিভাইস ব্যবহার করছে। এমনকি ঘুমানের সময়ও মাথার কাছে মোবাইল নিয়ে ঘুমাচ্ছে।’

ডিভাইস আসক্তিতে শিশুর বিভিন্ন আচড়ণগত পরিবর্তন হয় জানিয়ে সাইকোলজিস্ট ফারজানা ফাতেমা রুমী বলেন, একটি শিশু ডিভাইসে আসক্ত কি না এটা তার অভিভাবককেই খুঁজে বের করতে হবে। অভিভাবককে খেয়াল করতে হবে শিশুটি ডিভাইসকে সার্বক্ষণিক সঙ্গী বানিয়ে ফেলেছে কি না। ডিভাইস আসক্ত হলে শিশু প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। পরিবারের মানুষের সঙ্গে কথা বলা কমিয়ে দেয়। আড়াই-তিন বছরের শিশু তিনটি শব্দ দিয়ে কথা বলে। যেমন: আমি ভাত খাব। ডিভাইস আসক্তির কারণে সে এই তিনটি শব্দও বলতে চায় না। অর্থাৎ কথা বলার অভ্যাস কমে যায়। সারাক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে সে অন্যের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। মাথা নেড়ে কথার উত্তর দেয়। সাধারণত হ্যাঁ ও না এই দুটি শব্দের মধ্যে সে কথা শেষ করে।’

এ ছাড়া কিছু শারিরীক ও মানসিক সমস্যা হয় জানিয়ে সাইকোলজিস্ট রুমী বলেন, ‘টানা ডিভাইস ব্যবহারে চোখের পাওয়ার কমে যায়। ঝুঁকে মোবাইল দেখার জন্য ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করে। স্মার্ট ফোন ব্যবহারের জন্য পরবর্তী সময়ে আঙুল দিয়ে পেন্সিল ধরতে কষ্ট হয়, হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায়। খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি না করার কারণে শরীরের সাধারণ বৃদ্ধি কমে যায়। একই সঙ্গে মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। ক্ষুধাবোধ নষ্ট হয়ে যায়। মোবাইলে বিভিন্ন গেমস খেলার জন্য তার ভিতরে গেমসের বিভিন্ন চরিত্রের প্রভাব পড়ে। সে তখন সেই গেমসের চরিত্রের মতো আচড়ণ করতে থাকে। আসলে মোবাইল বা ল্যাপটপটা তার কাছে জাদুর বাক্স, এখানে সে একই সঙ্গে গেমস খেলছে, বিভিন্ন রাইমস, খেলার ভিডিও দেখছে। তাই এটি তার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চাইলে সে রাগ হয়ে যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কান্নাকাটি করে।’

ডিভাইস আসক্তি কমিয়ে আনতে করণীয় বিষয়ে তিনি জানান, প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে, সেটি হলো, মা-বাবাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে তিনি তার শিশুকে ডিভাইস আসক্তি থেকে সরিয়ে আনতে পারবেন। বোঝাতে হবে মোবাইল বা ল্যাপটপ কখনোই ভালো লাগার বা ভালোবাসার জায়গা হতে পারে না। খাবার খাওয়ানোর সময় গল্প শুনিয়ে কিংবা ছবির বই দেখিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। ঘরের বাইরে খেলতে নিয়ে যেতে হবে। ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাকে সময় নির্ধারণ করে দিন। ‘আমার চেয়ে আমার সন্তান ডিভাইস ভালো অপারেট করতে পারে’- এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এ ধরনের মন্তব্য তাকে ডিভাইস ব্যবহারে উৎসাহিত করে। বাসায় কিছু নিয়ম করুন। যেমন : সবাই একসঙ্গে বসে খাবার খাবে এবং সে সময় কেউ মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না।

মা-বাবাকেও শিশুকে সময় দিতে হবে জানিয়ে সাইকোলজিস্ট রুমী বলেন, তাহলে সেও তার অনুভূতিগুলো শেয়ার করার সুযোগ পাবে। সারাদিন সে কী কী করলো তার কাছ থেকেই গল্পের ছলে শুুনুন। সারাদিনে অন্তত আধ ঘন্টা সময় তাকে দিতেই হবে। ডিভাইস আসক্তি কমাতে ঘরের কাজে তাকে সহযোগিতা করতে বলা যেতে পারে। যেমন: তার কাপড়, বই-খাতাগুলো তাকেই গুছাতে বলা যেতে পারে। বাসায় গাছ থাকলে, গাছে পানি দিতে বলা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments