বৈশ্বিক মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ) ওয়েভ) শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে কোভিড-১৯ রোগটি চীনে সনাক্ত হলেও, পরবর্তীকালে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও, লকডাউন শিথিল করার পর আবার রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। আর এ পরিস্থিতি সামলাতে কীভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে জানিয়েছেন ডা. মধুসূদন মণ্ডল। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেজিস্ট্রার হিসেবে যুক্ত আছেন।
কোভিড- ১৯ কী?
`করোনাভাইরাস’ নামটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ করোনা থেকে। এর অর্থ ‘মুকুট’ বা ‘হার’। প্রাচীন গ্রিক শব্দ করোন থেকে সপ্তদশ শতকের দিকে ল্যাটিনে আসে করোনা শব্দটি। করোন শব্দের অর্থ পুষ্পমাল্য বা পুষ্পমুকুট। ল্যাটিন ভাষার শব্দ করোনা স্প্যানিশেও রয়েছে। আবার অন্য দিকে একে রাজমুকুটও বলা হয়।
করোনাভাইরাস এক ধরনের ভাইরাসের শ্রেণি বিশেষ। মুকুট বা ক্রাউনের মতো এই ভাইরাসের বাহ্যিক চেহারা। কারণ, মুকুটে যেমন স্পাইক থাকে, তেমনই এই ভাইরাসের বহিরঙ্গেও মুকুটের মতো স্পাইক রয়েছে। এতে একনজরে তা ক্রাউনের বেশ কাছাকাছি মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটলান্টার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন জানিয়েছে এই তথ্য।
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলো মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী (বাদুড়, উট ইত্যাদি) ও পাখিদের আক্রান্ত করে। তবে কদাচিৎ প্রাণীদের করোনা ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। যেমন সার্স কোভ (SARS-COV), মার্স-কোভ (MERS-COV) করোনা ভাইরাস অতীতে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সার্স-কোভ-২(SARS-COV-2) করোনা ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং মূলত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসটির সঙ্গে বাদুড়ের সার্স ভাইরাসের মিল পাওয়া গেলেও অতীতের সার্স-কোভ ও মার্স-কোভ থেকে এটি ভিন্ন। সার্স-কোভ-২ ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত রোগই কোভিড-১৯ নামে পরিচিত।
সংক্রমণের লক্ষণ মৃদু হতে পারে, অনেকসময় যা সাধারণ সর্দিকাশির মতো মনে হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাত্বক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এমনকি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
ইতিহাস
করোনাভাইরাস ১৯৩০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়। পরে সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এ রকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই’ (COV-229E) ও ‘মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩’(COV-OC-43) নামে নামকরণ করা হয়। তবে অনেকের সন্দেহ যে এই ভাইরাসটি চীন সরকার তার দেশের গরিব জনগনকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নিজেরাই তৈরি করে নিজেরাই ছড়িয়ে ছিলো।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সার্স কোভ-২ ভাইরাসটি চীনের হুবে (Hubei) প্রদেশের ওহান (Wuhan) শহরে সর্ব প্রথম শনাক্ত করা হয়। ভাইরাসটির আক্রমণে সাধারণ ফ্লু ধরনের লক্ষণ থেকে শুরু করে মারাত্বক শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, তথা রেসপেরিটরি ফেইলিউর পর্যন্ত হতে পারে।
১১ মার্চ, ২০২০ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিওএইচও) একে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯৯টি দেশে কোভিড-১৯ মহামারিটি ছড়িয়ে পড়েছে এবং দিনে দিনে সেটি বাড়ছে। বাংলাদেশও ২৮ মার্চ, ২০২০-এ ৪৮ জন সংক্রমিত রোগী এবং পাঁচ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কোভিড ১৯ সংক্রমণকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
কীভাবে ছড়ায়?
এই ভাইরাস মূলত নিম্নলিখিত উপায়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায়।
• সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে সংস্পর্শে আসলে।
• সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে তিন থেকে ছয় ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
• জীবাণুযুক্ত টেবিল, দরজার হাতল, বিছানার হাতল, স্যালাইনের স্ট্যান্ড, রোগীর বিছানা-পত্র ইত্যাদির সংস্পর্শে আসলে রোগ ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
• জ্বর
• হাঁচি-শু্ষ্ক কাশি
• নাক দিয়ে পানি পড়া (রাইনোরিয়া)।
• অবসাদ
• বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
• শ্বাসকষ্ট
• গলাব্যথা
• মাথাব্যথা
• অঙ্গ বিকল হওয়া
• পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়া
• মুখ ও নাকের স্বাদ হারিয়ে যাওয়া
• পায়ের পাতায় র্যাশ(rash) হওয়া
উপরের যেকোনো এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সনাক্তকরণ
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে গেলে, বা উপরে উল্লেখিত এক বা একাধিক লক্ষণ থেকে সন্দেহজনক ব্যক্তির কোভিড-১৯ সনাক্তকরণের জন্য আমাদের দেশে আরটি-পিসিআর (RT-PCR) টেস্ট করা হয়ে থাকে। এই জন্য শ্বাসতন্ত্রের ওপর ও নিচের ভাগের ক্ষরিত রস (secretions of respiratory tract) স্যাম্পল বা স্পেসিমেন হিসেবে নেওয়া হয়। সাধারণত নাকের ভিতর থেকে ও গলা থেকে নেওয়া হয়।
আরটি-পিসিআর টেস্টটি কখনো কখনো false negative হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থাৎ করোনা সংক্রমণ থাকা সত্ত্বেও টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষার মধ্যে বুকের এক্সরে বা সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে। এ ছাড়া সহযোগী পরীক্ষা হিসেবে রক্তের বিভিন্ন প্যারামিটার দেখা যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনা/ চিকিৎসা
চিকিৎসা দেয়ার জন্য কোভিড-১৯ রোগীদের মোটামুটি ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়।
• মৃদু (Mild) সংক্রমণ – সাধারণ সর্দি-কাশি, ফ্লু ধরনের লক্ষণ।
• মাঝারি (Moderate) সংক্রমণ – নিউমোনিয়া
• গুরুতর (severe) সংক্রমণ – শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট, সেপসিস।
• সংকটময় (Critical) সংক্রমণ – রেসপেরিটরি ফেলুওর বা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা লুপ্ত হওয়া।
হাসপাতালে রোগীর চাপ কমানো ও নতুন সংক্রমণ রোধ করতে মৃদু ও মাঝারি ধরনের সংক্রমণের রোগীরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন। তবে গুরুতর অসুস্থ বা সংকটাপন্ন রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রয়োজনে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে হবে।
বাসায় ব্যবস্থাপনা
* সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন; সেল্ফ-আইসোলেশনে (Self isolation) থাকতে হবে।
* পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। সম্ভব হলে আলাদা রুমে থাকতে হবে।
* বাইরের কারো সাথে সাক্ষাৎ করা যাবে না।
* অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে বার বার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
* হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু পেপার বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে অথবা হাতের কনুই দিয়ে নাক ঢেকে পরে ধুয়ে ফেলতে হবে।
* মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
* লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন :
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, হাঁচি কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ধরনের ওষুধ সেবন, কুসুম কুসুম গরম লবণ-পানি দিয়ে গার্গল(Gurgle) করা, গরম পানির ভাপ নেওয়া ইত্যাদি করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক ইত্যাদি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
* সুস্থ হওয়ার পরে (After clinical recovery) অন্তত ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে।
* শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশি বাড়া, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি খেয়াল করতে হবে। এমন হলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
* বাসায় চিকিৎসার সময়ে পালস-অক্সিমিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
হাসপাতালে ব্যবস্থাপনা
হাসপাতালের প্রবেশ মুখে স্বাস্থ্যকর্মী দিয়ে সম্ভাব্য শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগের লক্ষণসহ(জ্বর, কাশি. শ্বাসকষ্ট) রোগী সনাক্ত করতে হবে। রোগীসহ সবাই মাস্ক পরবে এবং সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুবে।
এরপর শনাক্তকারী রোগীকে আলাদা বিশেষ বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগ রুমে স্থানান্তর করতে হবে। পাশাপাশি রোগীর তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে।
এরপর চিকিৎসক রোগীর ভ্রমণ ইতিহাস বা সংস্পর্শে আসার ইতিহাস নেবেন ও পরীক্ষা করবেন। কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ থাকলে (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি) সেই সাথে ভ্রমণ ইতিহাস বা সংস্পর্শে থাকার ইতিহাস থাকলে রোগের আদর্শ সংজ্ঞা অনুসারে সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগ সনাক্ত করতে হবে।
সন্দেহজক কোভিড-১৯ রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ড বা কেবিনে পাঠাতে হবে। সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগ না হলে রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। ভ্রমণ ইতিহাস বা অন্য দেশ থেকে আসা মানুষকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে। এ ছাড়া কোভিড ১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস থাকলেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
যেসব সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে তাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করুন। কোভিড -১৯ প্রমাণিত না হলে এবং রোগীর অন্য জটিল সমস্যা না থাকলে রোগীকে ১৪ দিনের জন্য বাসায় অবস্থান ( হোম কোয়ারেন্টাইন) করতে পরামর্শ দিতে হবে।
তবে রোগ প্রমাণিত হলে রোগীকে চিকিৎসা প্রটোকল অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সাধারণত মৃদু উপসর্গ থাকলে বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে জ্বরের বা অন্যান্য উপসর্গের সাধারণ চিকিৎসা করা হয়। কোভিড-১৯ এর পাশাপাশি অন্য রোগ থাকলে( যেমন : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, সিওপিডি, সিকেডি, সিএলডি, ক্যানসার, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি) এবং ব্যক্তি ষাঠোর্ধ্ব হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এ ছাড়া নিউমোনিয়া, সেপটিক শক বা অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা প্রচলিত প্রটোকল অনুযায়ী করা হয়।
এ ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন : রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি। উক্ত হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে অথবা নিউমোনিয়া বা অন্যান্য জটিলতা তৈরি হলে প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করতে হবে । পর পর দুদিন জ্বরের ওষুধ ছাড়াই জ্বর না থাকলে এবং পর পর দুই দিন কোভিড-১৯ এর আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।
প্রতিরোধ
ব্যক্তিগত সুরক্ষা
* হাত পরিষ্কার রাখা। বারে বারে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা।
* কাজের সময় চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা।
* রোগীদের সরাসরি সেবা দানকারী ব্যক্তিদের পিপিই(PPE) পরিধান নিশ্চিত করা।
* জনসমাগম, ভীড়-ভাট্টা যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।
* নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। ধূমপান, এলকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা।
কীভাবে অন্যকে রক্ষা করবেন
* অসুস্থ বা সংক্রামিত হলে, সাথে সাথেই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।
* বাসায় থাকুন; আইসোলেশন মেনে চলুন।
* মাস্ক ব্যবহার করুন।
* কাজের আগে ও পরে হাত সাবান পানি দিয়ে ধুতে হবে।
* অন্যদের থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
* আসবাবপত্র, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করুন।
প্রবীণদের যত্ন
* সম্ভাব্য কোভিড-১৯ প্রবীণ রোগিদের ক্ষেত্রে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। প্রথাগতভাবে শুধু কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য না নিয়ে বরং তার অন্যান্য অসুস্থতা(Comorbiditis) সম্পর্কে ডিটেইলস জানতে হবে।
* প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে প্রবীণদের যত্ন নিতে হবে।
* সাধারণত প্রবীণরা অন্যান্য রোগের কারণে বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেন। সুতরাং কোভিড চিকিৎসাকালীন যেসব ওষুধ পরিহার করা সম্ভব, তা শুরুতেই পরিহার করতে হবে। এতে ওষুধ সংক্রান্ত জটিলতা (Adverse reaction) দূর হবে।
* মনে রাখতে হবে, প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং সংক্রমিত হলে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টির ঝুঁকি থাকে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং সংক্রমণ প্রতিরোধের নিয়মগুলো গুরুত্বের সাথে মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ডোনিং-ডোফিং পদ্ধতি
* আলাদা ডোনিং ও ডোফিং রুম থাকতে হবে।
* পিপিই(PPE) পরার সময় সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সঙ্গে থাকবেন।
* ডোনিং-ডোফিং এলাকাতে দেয়ালে একটি চেক লিস্ট(checklist) ঝুলানো থাকবে। এটি দেখে দেখে পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াটি শেষ করবে।
* পরিধানের আগে ডোনিংয়ের প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি সরঞ্জাম আগেই চেক করে নিতে হবে।
* হাতের আংটি, মানিব্যাগ ও অন্যান্য অলংকার প্রথমেই খুলে রাখতে হবে।
* ডোফিং এলাকা করোনা কেয়ার ইউনিটের বাইরে নিকটবর্তী দূরত্বে হতে হবে।
* ব্যবহৃত পিপিই(PPE) প্লাস্টিক বা পলিথিনে মোড়া বদ্ধ পাত্রে ফেলে দিতে হবে।
* মনে রাখতে হবে, ডোনিংয়ের চেয়ে ডোফিং প্রক্রিয়াটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ধাপ
ডোনিং
সাবান দিয়ে হাত ধোয়া > হেড ক্যাপ > জুতার কাভার > হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা > ভিতরের গ্লাভস > গাউন > মাস্ক > গগলস > হুড > বাইরের গ্লাভস।
ডোফিং
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার > বাইরের গ্লাভস > হুড > গাউন > জুতার কাভার > পুণরায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার > গগলস > মাস্ক > ক্যাপ> ভিতরের গ্লাভস > হাত সাবান পানি দিয়ে ধোয়া।
জেনে রাখা ভালো
• আইসোলেশন কী
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)র তথ্য মতে, সংক্রামক রোগযুক্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে আলাদা রাখাই আইসোলেশন।
• কোয়ারেন্টাইন কী
সংক্রামক রোগের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে আলাদা করা হলো কোয়ারেন্টাইন। আসলে কোনো ব্যক্তির শরীরে রোগটি হয়েছে কি না বা সে আক্রান্ত হয়েছে কি না- এটা বোঝার জন্যই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
• কোভিড-১৯ রোগটি একবার হওয়ার পর আবারও হতে পারে। তাই সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, যতদিন না পর্যন্ত আমরা একটি ফলপ্রসূ ভ্যক্সিন আবিষ্কার করতে পারছি।
করোনা কেবল মহামারি নয়। চলে গেছে অতিমারির পর্যায়ে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই রোগ থেকে আপনাকে মুক্ত রাখতে। তাই আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন।
অণুলিখন : শাশ্বতী মাথিন
তথ্যসূত্র
১. দৈনিক যুগান্তর
২. ন্যাশনাল গাইডলাইন অন ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অব করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯(কোভিড-১৯)
৩. উইকিপিডিয়া
৪. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা