শাশ্বতী মাথিন
জন্মের পর থেকে যখন বুঝতে শিখলেন, তিনি নারীও নন, পুরুষও নন; তখন থেকে এক ভিন্ন লড়াই শুরু হয় ইভান আহমেদ কথার জীবনে। আর সেটি ছিল নিজের ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়া পরিচয়কে ছাপিয়ে সবকিছুতে প্রথম হওয়ার লড়াই।
২০০৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম হিজড়া নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিজয়ী হন তিনি। ২০২১ সালে ৫০ কিলো ম্যারাথন দৌড়ে পাস করেন। ২০০৯ সালে তাঁর এক ঘণ্টার নাটক জমা হয় বিবিসি ওয়ার্ল্ডে। এই বছর বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদ লাভ করেন।
তিনি একাধারে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাকটিভিস্ট, মানবাধিকারকর্মী, নৃত্যশিল্পী, অভিনয়শিল্পী, লেখক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি সম্প্রতি উজ্জ্বলা থেকে বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।

‘ বনফুল ভাসমান বিউটি পার্লার ‘ নামে তাঁর নিজের একটি বিউটি স্যালন রয়েছে। এখান থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কমিউনিটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন। কথা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের জীবনেই চড়াই-উতরাইয়ের গল্প রয়েছে। তবে একজন ট্রান্সজেন্ডারের ক্ষেত্রে এই গল্পটি যেন ভিন্ন রকম। প্রথমে তাঁর নিজের দেহকে স্বীকার করে নেওয়ার লড়াই। এর পর সমাজে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। সেটাই আসলে করে যাচ্ছি।’
১৯৯৫ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য সংগঠন নারীপক্ষ-এর নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অধিকার, আন্দোলন ও মানবাধিকার বিষয়ে ধারণা নেন কথা। এরপর ১৯৯৭ সালে কান্দাপট্টি ইংলিশ রোড পাড়া উচ্ছেদ নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়েন। আর পেছনে ফিরে তাকাননি। শুরু হয় তাঁর অধিকার আন্দোলন।

১৯৯৯ সালে নারায়ণগঞ্জের যৌনপল্লি উচ্ছেদ নিয়ে ৮৬টি সংগঠন মিলে তৈরি হয় একটি মানবাধিকার নেটওয়ার্ক– সংহতি। বর্তমানে সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিমুহূর্তে চাই আমার কমিউনিটির মানুষ যেন অবহেলা বা বৈষম্যের শিকার না হয়ে সমাজে অন্য সাধারণ মানুষের মতো সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারে। আর এই জন্য আমার সকল কাজ।’
‘অনাথ শিশুদের জন্য আমার একটি স্কুল রয়েছে। কথা কলা কেন্দ্র নামে। সেখানে যৌনকর্মীদের শিশু, হিজড়া শিশু, ভিক্ষা করে সেই শিশু, বাসায় কাজ করে সেই শিশু এবং গৃহকর্মীদের শিশুরা লেখাপড়া করে। বনফুল নামে আমার যে বিউটি স্যালনটি রয়েছে, সেখান থেকে মাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। এটাও আমার জন্য বেশ আনন্দের,’ বলছিলেন কথা।

২০২৩ সালে জয়িতা ফাউন্ডেশন ও উজ্জলার উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণের সুযোগ হয় জানিয়ে কথা বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণের একটি ব্যাচ ছিল কেবল ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটিদের নিয়ে। সরকার ও উজ্জ্বলার এই যৌথ উদ্যোকে প্রশংসা জানাই। এই প্রশিক্ষণ আমার জীবনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আমি এখান থেকে কাজের কৌশল শিখেছি। ভবিষ্যতে আমার স্যালন থেকে আরও ট্রান্সজেন্ডারকে প্রশিক্ষণ দেবো এবং তাদের উন্নয়নে আরও কাজ করব– এটাই আশা।’
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিল ৭২তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭