সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় ছোটবেলায়; স্কুলে পড়া অবস্থায়। এরপর প্রায় তিন বছর আর লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে পারেনি। একটা সময় মনে হলো এটা আবার শুরু করা দরকার। বাসার সবার অজান্তে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। রেজাল্টও ভালো আসে। গ্র্যাজুয়েট শেষ করে রবীন্দ্র সংগীতের উপর। পাশাপাশি উজ্জ্বলা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিউটিফিকেশনের ওপর সব কোর্স সম্পূর্ণ করে এবং পঞ্চকর্মা আয়ুর্বেদিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে হার্বালজি ও ম্যাসাজের ওপর ডিপ্লোমা কমপ্লিট করে। পাশাপাশি ইয়োগা ও ডায়েটের ওপর কেরালা থেকে কোর্স করছে।
বর্তমানে নিজেই একটি স্যালন খুলেছে। এখানে চুল, ত্বকের সৌন্দর্য, ডায়েট ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করছে। এখান থেকে বেশ ভালো একটি আয় আসে। এভাবে নিজের সংসারকেও সাহায্য করছে সুপ্রীতি গোস্বামী প্রিয়া। কেবল তাই নয়, এসবের পাশাপাশি মঞ্চে অভিনয় করছে, আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে রবীন্দ্র সংগীতের ওপরও তালিম নিচ্ছে। জীবনের এই লড়াইটা কেমন ছিলো, তা জানবো তার মুখ থেকেই।
অর্থনৈতিকভাবে খুব স্ট্রাগল করেছি
বিয়ের কয়েক বছর পর আমার স্বামীর হিপ জয়েন্টে সমস্যা হয়। কাজ করতে পারছিলেন না। আমার বাবা ও শ্বশুরের ভালো অবস্থা ছিলো। তবে কাউকে বলতে পারিনি। টাকা চাইতে পারিনি। সন্তানকে খাওয়াতেও কষ্ট হতো। তখন মনে হলো এভাবে বসে থাকা যাবে না। কাজ করতে হবে এবং কাজের জন্য, নিজেকে দক্ষ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
ঢাকায় চলে যাই উজ্জ্বলাতে প্রশিক্ষণ নিতে। সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করি। এটি ২০১৭ সালের ঘটনা। উজ্জ্বলার সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট প্রশিক্ষণ নিতে আহামরি টাকা লাগে না। পাশাপাশি ধীরে ধীরেও ফি দেওয়া যায়। টাকা আয়ের জন্য পরিচয় লুকিয়ে আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেনিকিউর, পেডিকিউর ও ফেসিয়াল করতাম। তবে বর্তমানে
নিজের পার্লার থেকে আমি প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছি।
ভেষজ উপাদান দিয়ে কাজ করি
মেনিকিউর, পেডিকিউর, হেয়ার ট্রিটমেন্ট, স্কিন ট্রিটমেন্ট ও মেকওভার নিয়ে কাজ করছি। আমার কাজটাই ভিন্ন। ভেষজ উপাদান ব্যবহার করি। আমরা শুদ্ধতা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। কাঁচা উপকরণ দিয়ে ফেসিয়াল করানো হয়। স্ট্রবেরি, লিকোরিক পাউডার, জাফরানের জল, দুধ ইত্যাদিকে প্রক্রিয়াজাত করে সার্ভিস দিই।
উজ্জ্বলায় কোর্স করার সময় গ্রুমিংয়ের একটি বিষয় ছিলো। উজ্জ্বলা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে সততার সঙ্গে ব্যবসা করতে হয়। অনেক স্যালনেই সস্তা ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করা হয়। তবে আমি কাজ করার সময় ব্রান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। বর্তমানে আমার স্যালনে তিনজন কর্মী কাজ করছেন।
জীবনের কঠিন সময়ে উজ্জ্বলাকে পাশে পেয়েছি
জীবনের খুব কঠিন সময়ে উজ্জ্বলা আমার পাশে ছিলো। মেনটর হিসেবে আফরোজা আপাকে পেয়েছি। উজ্জ্বলা আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে নিজেকে আলোকিত করে অন্যদের উজ্জীবীত করতে হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি আমাকে শিখিয়েছে নিজেকে ঠিক রেখে কীভাবে অন্যদের সাহায্য করতে হবে। স্বাস্থ্য, ত্বক নিয়ে আমার আরো কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। আমার উদ্দ্যশ্য কেবল টাকা আয় করা নয়, মানুষেরও উপকার করা। এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ১৭তম।