Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeঅন্যান্যওয়াহিদুল হুদা ডালটনের দুই কবিতা

ওয়াহিদুল হুদা ডালটনের দুই কবিতা

১. 

কবিতায় পড়া বনলতা সেন

মেইল ট্রেনটা প্ল্যাটফর্ম ছুঁতেই
আরো অনেকের সাথে সাথে
হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লে তুমিও।
খুঁজে পেতে একদম ঠিক
আমার সামনের আসনেই।

জানালার ঠেস দিয়ে আয়েসীভঙ্গিতে
জীবনানন্দ দাশ পড়ছিলাম।
চোখ তুলতেই চোখাচোখি।
তুমি চোখ নামিয়ে নিলে।
আর আমি? জমে গেছি যেন!
জানি না কেন, চোখের ওপর থেকে
সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম।

এত সুন্দর কেউ হতে পারে!!
জানা ছিল না মোটেও।
ঠিক যেন একটা মোমের পুতুল
কেউ এনে বসিয়ে দিয়েছে।

বাইরে হকারের হাঁক-ডাক
মিলিয়ে যেতে লাগলো।
ট্রেনের গতি বেড়ে চলেছে।
আকাশে মেঘের হরদম আনাগোনা।

সহসা আকাশ কালো করা
মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে নেমে এলো।
বৃষ্টির ছাঁট তোমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে,
অসহায় ভঙ্গি তোমার।
আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে
জানালার কাচটা নামিয়ে দিলাম।
তুমি ধন্যবাদটুকুও জানালে না।

গভীরভাবে কবিতায় ডুবতে চাইছি,
‘পাখির বাসার মতো দুটি চোখ,
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য!’
কী পড়ছি এসব?
কল্পনার বনলতা সেন তো আমার সামনে!
হুবহু মিলে যাচ্ছে সব বর্ণনা।
কবিতার পাতা থেকে ওঠে এসে
যেন ঠিক আমার সামনে বসেছ।

কী মনে হতে তুমি মুখ তুলে চেয়েই,
“কবিতা পড়েন বুঝি?
জীবনানন্দ দাশ আমারও খুব প্রিয়।”
সহসা এমন প্রশ্নের জন্য
প্রস্তুত ছিলাম না মোটেই।
কোনো মতে বললাম, ‘ও, তাই বুঝি?’

শুরু হলো আলাপচারিতা।
সবটাই কবি ও কবিতা নিয়ে।
ব্যক্তিগত অব্দি গড়ালো না তা।
শুধু জানলাম তুমি সাহিত্য নিয়ে পড়ছো,
আর আমি পড়াই।
ব্যাস, ঐটুকুই শেষ।

আরও কিছু বলার ছিলো।
হয়তো বলতে চেয়েছিলাম
বনলতা সেনের কথা।
বললাম না আর কিছুই।
আমার শিক্ষা আর রুচিবোধ
এসে কন্ঠরোধ করে দিল।
কে জানে, পাছে ফের হ্যাংলা ভাবো কি না!

সহসাই তোমার মাঝে চাঞ্চল্য।
গন্তব্য সামনে বুঝেই বুঝি।
ট্রেনের সিটি বেজে উঠলো,
আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্মে এসে থামতেই
উঠে দাঁড়ালে তুমি।
যাবার সময় মিষ্টি হেসে বলে গেলে,
‘ভালো থাকবেন।’
আমি বসে রইলাম সেভাবেই।
আর বনলতা সেন?
কবিতার বইয়ের পাতায়।

২.
আবার বনলতা সেন

ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী মেখে ফর্সা হবার
প্রতিযোগিতায় নামেনি মেয়েটা।
ডাগর চোখে কাজল পরেছে কি না বোঝার উপায় নেই।
খোলা চুলে এলোমেলো বাতাসেরা খেলা করছে,
তবু সময় নিয়ে গুছিয়ে বাঁধেওনি।
কে জানে কিসের এতো তাড়া ছিল?
হাতে বেশ কদিন আগের মেহেদীর ফিকে প্রায় রং,
বেশ ক’ গোছা কাঁচের চুড়ি আর কপালে টিপ।
ঘটা করে বলার মতো আর বিশেষ কিছু পেলাম না।
তবু কেন যেন এক ঝলক দেখেই মনে হলো,
কতো দিনের চেনা! আগে যেন কোথাও দেখেছি!
কোথায়, কোথায়? নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না।
ট্রেনে ঠিক মুখোমুখি বসা আমরা।
চোখ বুঁজে নিবিষ্ট মনে গান শুনছেন তিনি।
ট্রেন চলছে, আমিও মনে মনে খুঁজেই চলেছি।
মনের সব কোণা মোটামুটি খোঁজা শেষ।
হঠাৎই যেন সমাধান নিয়ে এলেন জীবনানন্দ দাশ!
বনলতা সেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো বনলতা সেন!
কবি যেন এঁর সাথেই পরিচয় করিয়েছিলেন।
বুকের ভিতর প্রবল আলোড়ন চলছে,
তাঁকে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
ট্রেন হুইসেল দিয়ে নাটোর স্টেশনে পৌঁছালো।
কান থেকে হেডফোন খুলে ব্যাগ গুছালেন তিনি।
ট্রেনের জানালা দিয়ে এক ভদ্রলোক উঁকি দিয়ে,
‘কি গো, পৌঁছালে অবশেষে? জলদি নামো!’
উনি আস্তে করে নেমে গেলেন ট্রেন থেকে।
এতটা সময়ের সফরে একটিবার আমার দিকে দেখেননি।
কোনো আলাপচারিতার ছুঁতোও পাইনি তাই।
নামটাও জানা হলো না। শুধু জানলাম,
বনলতা সেন এখনও নাটোরেই আছেন।
সংসারও করছেন বোধ হয় দিব্যি জমিয়ে।
বিষয়টা জীবনানন্দ দাশকে জানাতে পারলে বেশ হতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments