শাশ্বতী মাথিন
একুশ বাঙালির অহংকার; আর বাংলা ভাষা, বর্ণমালা বাঙালির আবেগ। এই বর্ণমালাকে নিজের করে পেতে বায়ান্নতে রক্ত ঝড়িয়েছেন ভাষাসৈনিকরা। একুশ ছিল বলে বাংলাকে এত আপন করে পাওয়া।
একুশের এই আবেগের প্রকাশ দেখা যায় পোশাকের ভেতরেও। আসলে যেকোনো উৎসব, দিবসে বাঙালির সাজ-পোশাকে ছিল নিজস্বতা। ১৯৮২-৮৩ সালে ডিজাইনার, গবেষক চন্দ্র শেখর সাহা বর্ণমালার নকশা দিয়ে পোশাক ডিজাইন করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতা চলছে এখনো। এক, দুই অক্ষর থেকে শুরু করে আজ শাড়ির জমিনজুড়ে বাংলা বর্ণমালা, কবিতার প্রাধান্য। এ ছাড়া শাড়ি, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ছোটদের পোশাকের নকশায় এসেছে শহীদ মিনার, বিভিন্ন জ্যামিতিক কারুকাজ। আগে কেবল সাদাকালো রঙে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন লালের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে পোশাকে। এ যেন শক্তি ও শোকের এক অনবদ্য আভাস।
একুশের পোশাকের এবারের ট্রেন্ডের বিষয়ে বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘যে ভাষায় আমরা কথা বলি, যার মাধ্যমে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করি তাকে অর্জনের জন্যই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল বাঙালি জাতির বীর সন্তানেরা। ফেব্রুয়ারি মানেই বাংলা ভাষার জয়গান পৃথিবীর সকল ভাষার মানুষের মুখে। বাঙালির চেতনায় বিশ্ববাসীও উজ্জীবিত হয় এ সময়। তবে এখন এটি কেবল উদযাপনের দিন নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের দিনও। একুশকে ঘিরে পোশাকের ফ্যাশনে এসেছে নানা রকম বৈচিত্র্য। পোশাকগুলো সাজানো হয়েছে কালো আর সাদার আঙিকে। কিছু ক্ষেত্রে লাল রঙের উপস্থিতি কালো আর সাদা রংকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। বাংলা বর্ণমালা হয়ে উঠেছে পোশাক চেতনার অনুষঙ্গ।’
শীতের শেষবেলায় পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে সুতি কাপড়। বিশ্বরঙের শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, উত্তরীয়, মগ ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে শহীদ মিনার, বাংলা বর্ণমালাসহ জ্যামিতিক (বর্গাকার, সোজা লাইন ইত্যাদি) নকশার বিভিন্ন নান্দনিক অনুষঙ্গ। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাই-ডাই, ব্লক-বাটিক, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদি বলে জানান বিপ্লব সাহা।