শ্রাবণী সাহা
মিতা হক, কারো ‘মিতা আপা’, কারো ‘মিতা খালা’, কারো ‘মিতা মাসিমা’ বা ‘মিতা পিসী’। মানুষকে কাছে টেনে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। ‘মিতা আপা আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে’- এই অনুভুতি বোধকরি তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন এমন সকলের।
তিনি ছিলেন আমার সংগীত গুরু। তাঁকে কেবল একজন শিক্ষক বললে কম বলা হবে। সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারার এক অসাধারণ যোগ্যতা ছিলো তাঁর। আর এই গুণই তাকে অন্য দশজন থেকে আলাদা করেছে।
মিতা হকের জন্ম হয় ১৯৬২ সালে। বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংগীত চর্চার প্রচার ও প্রসারে যে কজন মানুষ অগ্রণী, তাঁদের মধ্যে তিনি অনন্য। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। একক ভাবে ২৪টি অ্যালবাম মুক্তি পায় তাঁর। ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক পান। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে তাকে একুশে পদক দেয়। তিনি সুরতীর্থ নামে একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান রেখে গেছেন।
একজন শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতা যে অনেক তা তাঁর কাজে, গানে, বক্তব্যে সবসময় প্রকাশিত হয়েছে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারার সাহস তাঁর চরিত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট ছিলো। এই গুণী মানুষটি আজীবন দেশপ্রেমের দীক্ষায় দীক্ষিত ছিলেন। কেবল তাই নয়, তিনি এই প্রেমে দীক্ষিত করেছেন তাঁর শিষ্য, পরবর্তী প্রজন্মকেও। তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ একজন মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঝড় ঝাপটাকে সঙ্গী করে আমৃত্যু দেশের সকল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সর্বাগ্রে থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানকে সঙ্গী করে আমাদের সংস্কৃতি চর্চাকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ঘুরেছেন দেশের আনাচে কানাচে।
১১ এপ্রিল ছিলো মিতা হকের প্রথম প্রয়ান দিবস। দিবসটিতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি। তাঁর জীবন আমাদের কাছে অণুস্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন।
লেখক : শিক্ষক, সুরতীর্থ।