সাতকাহন২৪কম
জীবনের শুরুটা খুুব সুখের ছিলো না তাঁর। ভালোবেসে বিয়ে করে ফেলেন ২০০১ সালে। পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি এ কারণে। তবে শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর বার বার শুনতে হয়েছে, ‘সে খুব কালো’। কালো হওয়ার কারণে তাকে নিয়ে মানুষের সামনে মুখ দেখানো যায় না। যেন ফর্সা লাগে, তাই বেশি বেশি করে পাউডার দিয়ে মানুষের সামনে আনা হতো তাকে।
এসব সহ্য করতে করতে একটা সময় খুব জেদ ধরলেন। ভাবলেন, সৌন্দর্য নিয়ে কাজ করতে হবে। কীভাবে সব অবস্থাতেই নিজের ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায় সেই কৌশল জানতে হবে। এ ভাবনা থেকেই উজ্জ্বলায় মেকআপের কোর্স শিখতে আসা।
যেই মানুষটির গল্প এতক্ষণ পাঠকদের জানালাম তিনি মাকসুদা পারভীন শিউলি। উজ্জ্বলা থেকে মেকআপের কোর্স করে এখন তিনি নিজেই একটি স্যালন খুলেছেন। হয়েছেন উদ্যােক্তা। এখন তাঁর কাছেই সবাই সাজতে আসে, সুন্দর হতে চায়। মাসে যেই টাকা আয় করছেন তা দিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই চলছে সংসার। স্বামীকেও সাহায্য করতে পারছেন। স্বামীর ব্যবসার জন্য আলাদা করে দোকান তৈরি করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঠাকুরগাঁয়ে পার্লার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। নিজের জীবনের সংগ্রাম ও উজ্জ্বলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গল্পগুলোই জানবো এ পর্বে-
উজ্জ্বলা ছায়ার মতো ছিলো
জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। বিয়ের পর ভাসুর পাঁচ বছর শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। স্বামীকে বার বার শোনানো হয়েছে ‘কী দেখে বিয়ে করেছো? শ্বশুর তো যৌতুকও দেয়নি।’ তবে আজ আমি স্বাবলম্বী। স্বামীকে নিজেই সহযোগিতা করতে পারি। এ পথটা বেশ কঠিন ছিলো। এই ইন্টারভিউর জন্য যখন ফোন দেওয়া হলো, তখন আমার স্বামী কেঁদে দেয়। বললো, ‘অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছো তুমি!’
উজ্জ্বলায় যখন শিখতে এসেছি ঢাকায় থাকতে হতো। স্বামী মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিতে পারতো মাসে। খুব কষ্ট হতো থাকতে। কিন্তু উজ্জ্বলা সহযোগিতা করেছে। তারা মাথার ওপর ছায়ার মতো ছিলো। আমি ছিলাম উজ্জ্বলার প্রথম শিক্ষার্থী।
উজ্জ্বলাতে যা শিখেছে, সেটা কোথাও পাইনি। উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপার কাছ থেকে গ্রুমিং শিখেছি। গ্রুমিং সম্পর্কে প্রথম ধারণা হয় এখানেই। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কীভাবে নিজেকে গঠনমূলকভাবে তৈরি করতে হবে, সেই শিক্ষাই পেয়েছি।
উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা উজ্জ্বলা থেকেই পাই
উজ্জ্বলার সব খুব গোছানো। তারা সবাই খুব আন্তরিক। বর্তমানে আমি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করি। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এসব করার সাহস জুগিয়েছে উজ্জ্বলা। উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতাটা উজ্জ্বলা থেকেই পেয়েছি।
আমার জীবনে আফরোজা পারভীন আপার অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক। আপুর জীবনও অনেক স্টাগলিং ছিলো। আপুকে দেখে মনে হয়েছে, এতো কিছুর পর তিনি যদি পারেন, আমি কেন পারবো না। উজ্জ্বলার সঙ্গে সম্পর্কটা এমনই থাকুক এটাই চাই। উজ্জ্বলা যেমন আমাদের দিয়েছে, আমরাও প্রতিষ্ঠানটির নাম উজ্জ্বল করতে চাই।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৫১তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭