সাতকাহন২৪.কম
ছেলে হয়ে বিউটি আর্টিস্ট হয়েছেন- সমাজ এই বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে চায়নি। একবার তো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বউ সাজাতে গিয়ে ভীষণ অপদস্ত হয়েছিলেন। পরে অবশ্য বউয়ের সাজ দেখে সবাই খুব সমাদর করে। এমনকি যিনি সবচেয়ে বেশি বাজে কথা বলেছিলেন, তিনিই তার মেয়ের বিয়েতে সাজাতে বলে।
যাঁর কথা বলছি, তিনি আরিয়ান মামুন। উজ্জ্বলা থেকে বিউটিফিকেশনের কোর্স করে বর্তমানে নিজেই একজন প্রতিষ্ঠিত বিউটি আর্টিস্ট হয়েছেন। মিডিয়াতে কাজ করছেন। যখন কাজ খুব কম থাকে তখনও প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো মাসিক আয় করেন তিনি। জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মেকআপের বিষয়ে একটি আগ্রহ ছিলো। কেউ সাজলে দেখতে ভালো লাগতো। ইউটিউবে এসব সম্পর্কিত ভিডিওগুলো দেখতাম। ছেলে হয়ে মেকআপের প্রতি আগ্রহ, এটি হয়তো পরিবার পছন্দ করবে না। তাই কারো কাছে প্রকাশ করতে সংকোচ করতাম।’
নিজে নিজে শিখতে গিয়ে একটা সময় ভাবলেন মেকআপ নিয়ে কিছু করা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই প্রফেশনালভাবে শেখার আগ্রহ তৈরি হওয়া। তবে এতেও অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। অনেকগুলো বিউটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঘুরেছেন। তবে ছেলে হওয়ার কারণে কেউই তাকে শেখার সুযোগ দিতে চায়নি। এরপর সন্ধান পেলেন উজ্জ্বলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শেখা শুরু করেন। বললেন, ‘অনেক জায়গায় কোর্স করার জন্য যোগাযোগ করি। কেউ সাহায্য করেনি। মুখের ওপর নিষেধ করে দিয়েছে। তবে উজ্জ্বলা সেই পথটা খুলে দেয়। উজ্জ্বলা সাদরে গ্রহণ করে। তারা সুযোগ না দিলে হয়তো বিউটি আর্টিস্টই হতে পারতাম না।’
উজ্জ্বলার ফ্যাকাল্টি ও শিক্ষকরা আমাকে খুব সহযোগিতা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমনকি যেসব আপুগুলো প্রশিক্ষণ নিতে আসতো, তারাও অনেক সাহায্য করেছে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য মডেল প্রয়োজন হতো। আমি সেটা জোগাড় করতে পারতাম না। তখন শিক্ষার্থী আপুরাই নিজে থেকে আমার মডেল হতেন। উজ্জ্বলা খুব আপন একটা জায়গা আমার জন্য।’
উজ্জ্বলায় সবকিছু খুব নিঁখুতভাবে শেখায়। কোনো কিছু না বুঝতে পারলে শিক্ষকরা কখনো বিরক্ত হয় না। বিষয়টিকে খুব সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। উজ্জ্বলায় শেখার পর থেকে খুব ভালোভাবে কাজটি করতে পারছি- জানান তিনি।
বিউটি আর্টিস্ট হওয়ার শুরুর দিকে যখন ফেসবুকে পোস্ট দিতেন, তখন অনেকেই তাকে খুব বাজেভাবে কথা বলতো। গালিগালাজ করতো। ‘ছেলে হয়ে মেয়েদের সাজাচ্ছে- বিষয়টিকে এতো নোংরাভাবে নিতো! আমি বোঝাতে পারতাম না এটা আমার পেশা। এর মধ্যে বাজে কিছু নেই। বিষয়গুলো আমাকে ভীষণ আঘাত করতো। হিজড়া, থার্ড জেন্ডার এসব গালিও শুনতে হয়েছে। এগুলো যে কী কষ্টের বলে বোঝাতে পারবো না।’
মেকআপ না করতে পারলে, কাজ না করতে পারলে, বোধ হয় আমার সত্ত্বাকে মেরে ফেলতাম। আসলে আমি তো একজন শিল্পী। মেকআপের শিল্পী। উজ্জ্বলার কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। তারা আমাকে কাজটি করতে দিয়েছে। আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। উজ্জ্বলার কাছ থেকে অদম্য ১০- এর সম্মাননা পেয়েছি। নারী-পুরুষ সবার জন্যই উজ্জ্বলার পরিবেশ খুব ভালো,’ বলছিলেন তিনি।
ভবিষ্যতে এই পেশার মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হতে চাই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেশাটিকে আমি খুব ভালোবাসি ও সম্মান করি। ছেলেদের জন্য এই সেক্টরে কাজ করা সহজ হোক এটাই স্বপ্ন দেখি।’
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ২৬তম।