সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
বিউটি আর্টিস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উজ্জ্বলা থেকে কোর্স করে একটি স্যালন খুলেছেন নিপা আক্তার। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। মাস শেষে হাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতো থাকে। তবে স্যালন শুরু করা ও বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পথটি তাঁর জন্য সহজ ছিল না। সমাজ, আত্মীয়-স্বজনের অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে। অনেক সময় মনে হয়েছে, তাকে দিয়ে আর বোধ হয় কিছু হবে না। ভেঙে পড়েছেন, বিষণ্ণতায় ভুগেছেন। তবে উঠে দাঁড়িয়েছেন শক্ত হয়ে। বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে সফল এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার গল্প শুনবো আজ। জানবো তার চলার পথে উজ্জ্বলার ভূমিকার কথা।
উজ্জ্বলা হাত ধরেছে, পথ দেখিয়ে দিয়েছে
আমি শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করি। লেখাপড়া শেষের পরপরই বিয়ে হয়ে যায়। সন্তান হয়ে যাওয়ায় কোথাও চাকরিও করতে পারছিলাম না। সংসার-সন্তান সামলানো খুব হিমশিম লাগতো। মন খারাপ হয়ে যেতো। ভীষণ বিষণ্ণতার মধ্যে ছিলাম। মনে হতো, বন্ধুরা সবাই এগিয়ে যাচ্ছে, আমি কিছুই করতে পারছি না। ভীষণভাবে চাচ্ছিলাম কিছু করি। চাচ্ছিলাম, নিজে আয় হোক। অন্যের ওপর নির্ভরতা ভালো লাগছিলো না। তখন ফেসবুকে উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা ও রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন আপার ভিডিও দেখতাম। সীদ্ধান্ত নিলাম স্যালনের কাজ শিখবো।
শেখার সীদ্ধান্ত নেওয়ার পর আরেক বাধার সম্মুখীন হলাম। আত্মীয়-স্বজন বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া শুরু করলো। পার্লারে কাজ ভালো নয়। এটা নিচু পেশা। এমন মানসিকতা পোষণ করতো। নেতিবাচক কথা বলে মন ভেঙে দিতো। তবে আমি শেখার শুরু করলাম। প্রথমদিকে ফোকাস করতে পারতাম না কাজে। দুশ্চিন্তা হতো, পারবো কি না! বিশ্বাসের জায়গাটায় খুব টালমাটাল ছিলাম। এ সময় আত্মবিশ্বাস জোগায় উজ্জ্বলা। আমার দ্বন্দ্বময় মানসিকতায় তারাই হাতটা ধরে পথ দেখিয়ে দেয়, সাহায্য করে। আসলে উজ্জ্বলা একটি পরিবার। এখানে একজন শিক্ষার্থীকে কেবল শেখানোই হয় না। পাশাপাশি তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজে যেখানে এখনো পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যর বিষয়টি উপেক্ষিত, সেখানে উজ্জ্বলা তাদের শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রুমিং ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্লাস করায়। স্বনামধন্য মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষকরা আসেন শেখাতে।
কাজটা শিখতেই হবে
আত্মীয়-স্বজনরা বার বার বলতো পার্লারের কাজে কোনো মর্যাদা নেই। আমি বলেছি এটা সেবা। বােঝানোর পরও বুঝতো না। তবে আমার স্বামী ও মা সহযোগিতা করেছে। তাঁরা বলেছে, বাইরের মানুষ কী বলে এতে কান দিও না। নিজের কাজ করে যাও। এরপর এক রকম জেদ ধরি। কাজটিই শিখতে হবে। নিজেকে চাপ দেওয়া যাবে না, উৎসাহিত করতে হবে। মায়ের কাছে সন্তান রেখে যেতাম। ক্লাস শেষ হওয়ার পর মনে হলো একটা পার্লার দিবো। আবার সেই আত্মীয়-স্বজন বাধা হয়ে দাঁড়ালো। তবে স্বামীর সহযোগিতায় কাজ শুরু করতে পারি। পার্লার খোলার জন্য সে-ই মূলধন দেয়। ছোট করে একটি স্যালন খুলি।
উজ্জ্বলায় না গেলে, বুঝতে পারতাম না আমার ভেতরে এমন প্রতিভা রয়েছে। মেয়েদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আগাতে হবে। ধৈর্য নিয়ে কাজ করার বিষয়টা উজ্জ্বলা থেকে পেয়েছি। কাস্টামার কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়, নিজেকে কীভাবে সব চাপের ভেতর শক্তভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়, উজ্জ্বলার কাছ থেকে শিখেছি।
মেকআপের সময়ে কীভাবে ব্রাশ ধরতে হবে, সেটাও শেখায় উজ্জ্বলা। বুঝিনি বা পারছি না- এসব বিষয়ও বলতে হয় না। বলার আগেই অনেক সময় প্রশিক্ষকরা বুঝে যায় এবং সেই অনুযায়ী শেখায়। ভয় কাটিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করা এবং নিজের বিষয়টি আদায় করে নেওয়াটাও উজ্জ্বলার কাছ থেকেই শিখেছি।
ধৈর্য ধরে কাজের পেছনে লেগে থাকা উজ্জ্বলা শিখিয়েছে
পার্লার শুরু করার প্রথম কিছু সময় ক্লাইন্ট আসতো না। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে ব্যবসা দাঁড় করাবো! মনে হচ্ছিলো, তবে কি হেরে গেলাম! কিন্তু ধীরে ধীরে ক্লাইন্ট আসা শুরু করলো। ধৈর্য ধরে কীভাবে কাজের পেছনে লেগে থাকতে হয়, সেটাও উজ্জ্বাই শিখেয়েছিলো।
ভবিষ্যতে, নিজের পার্লারটিকে বড় করার এবং দ্বিতীয় আউটলেট করার ইচ্ছে রয়েছে। কিছু মেয়েকে কাজ দিয়ে যেন স্বাবলম্বী করে তুলতে পারি, সেটাই চাই।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৩২তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/