সাতকাহন২৪.কম
‘উজ্জ্বলা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। করেছে পরিপূর্ণ। বিয়ের নয় বছর পরও আমার সন্তান হচ্ছিলো না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। যেকোনো কাজের ভেতরে ডুবে থাকতে চাইতাম। উজ্জ্বলা সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এখান থেকে বিউটিফিকেশনের কোর্স করে খুব উপকৃত হয়েছি। জীবনের অনেক বাঁঁক রয়েছে, মোড় রয়েছে। কেবল এক কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে থাকা জীবন নয়- এই বিষয়টা উজ্জ্বলার কাছ থেকে শিখেছি’, বলছিলেন শাহরিয়ার সুলতানা।
শাহরিয়ার সুলতানা সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজ থেকে মার্কেটিং বিভািগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। ছোটবেলা থেকেই সাজগোজের প্রতি টুকটাক আগ্রহ ছিলো তাঁর। সখের বসেই বিউটিফিকেশনের কোর্স করেন জাতীয় মহিলা সংস্থায়। এরপর এই বিষয়টি শেখার তীব্র আগ্রহ হয়। উজ্জ্বলায় ভর্তি হন। শুরুর দিকে স্বামী একটু সংকোচ করলেও, উজ্জ্বলার পরিবেশ দেখে এবং ফ্যাকাল্টিদের সঙ্গে কথা বলে এখানে কোর্স করাতে রাজি হন। তবে খুব কঠিন সময়ে এই শেখাটাই কাজে আসবে ভাবেননি।
করোনার তীব্র ভয়াবহতার সময় এটিই হয়ে উঠে তাঁর মূল পেশা। বলছিলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করতাম। ছোট বেলায় বাবা মারা যান। আমরা নানার বাড়িতে থাকতাম। করোনার সময়ও অন্তত দুই ঘণ্টা আমাদের ব্যাংকে গিয়ে কাজ করতে হতো। বাড়ির সবার সুস্থতার কথা ভেবে এই কাজ করাটা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। পরে কাজটি ছেড়ে দিই। কয়েক মাস পর বাসার কাছেই একটি স্যালন খুলি।’
এখন আমার মূল আয় হয় স্যালন থেকে। তবে এটি খোলার আগে তেমন সাহস পাচ্ছিলাম না। ভাবছিলাম, পারবো তো! সেই সময়ে উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন ম্যামের সঙ্গে কথা বলি। ম্যাম আমাকে ভীষণ উৎসাহ দেন। সেই সাহস আজও আমার চলার পথের শক্তি- জানান তিনি।
২০ মার্চ, ২০২২- এ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ১০০ জন সফল তরুণ-তরুণীকে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা ও সনদ প্রদান করে উজ্জ্বলা।
শাহরিয়ার সুলতানা উজ্জ্বলার পক্ষ থেকে সেরা ১০- এর অ্যাওয়ার্ড পান। ‘এটি আমার জন্য অনেক আবেগঘন দিন ছিলো। ভাবতেই পারিনি অ্যাওয়ার্ড পাবো। সে সময় আমার স্যালনটা একটু খারাপ চলছিলো। তবে উজ্জ্বলার কাছ থেকে পাওয়া এই সম্মাননা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রতিষ্ঠানটি পাশে ছিলো বলেই শক্তি পেয়েছি। আমার মতো যারা এই সম্মাননা পেয়েছে, তাদের কাছেও বিষয়টি এমন,’ বলেন তিনি।
উজ্জ্বলার সব ফ্যাকাল্টিরাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ক্লাস করান। আমাদের ফ্যাকাল্টিরা দেশের শীর্ষস্থানীয় আর্টিস্ট ছিলেন। তাদের কাছ থেকে শিখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়। এখানে বিজনেস ডেভলপমেন্টের ওপর একটি কোর্স করান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আদিত্য সোম স্যার। শুরুর দিকে মনে হতো এই ক্লাসটি কেন করানো হয়। একদমই মনোযোগ দিতাম না ক্লাসটিতে। তবে এখন স্যালন খোলার পর বুঝি এই কোর্সটি কত উপকারী ছিলো। আসলে একজন বিউটি আর্টিস্টের প্রতিষ্ঠিত হতে যেসব বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন, তার সবগুলো কোর্সই করানো হয় উজ্জ্বলায়- জানান তিনি।
‘ভবিষ্যতে নিজের পার্লারকে আরো প্রতিষ্ঠিত করতে চাই এবং একজন দক্ষ বিউটি আর্টিস্ট হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখি। উদ্যোক্তা হিসেবে আরো যোগ্য হতে চাই,’ বলেন শাহরিয়ার সুলতানা।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ২৭তম।