Thursday, February 13, 2025
spot_img
Homeজীবনের খুঁটিনাটিউজ্জ্বলা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে

উজ্জ্বলা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে

সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক

আটবার গর্ভপাত হয় ফারহানা খানের। মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন, কোনো কাজ করতে উৎসাহ পাচ্ছিলেন না। তীব্র অবসাদ ও বিষণ্ণতা ভর করে শরীর ও মনে। একটি বুটিকসের ব্যবসা ছিল, ছিল ফ্রোজেন ফুডের ব্যবসা- বিষণ্ণতার কারণে সেসবও ছেড়ে দেন। শেষে স্বামীর আগ্রহে উজ্জ্বলায় এসে বিউটিফিকেশনের ওপর কোর্স শুরু করেন।

একটা/ দুটো করে ধীরে ধীরে সবগুলো কোর্স করে এখন ছোট পরিসরে একটি স্টুডিও স্যালন দিয়েছেন। ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান এসেছে তাঁর কোল জুড়ে। মানসিকভাবেও বেশ ভালোই আছেন। সংসার-সন্তান সামলাচ্ছেন, হয়েছেন উদ্যোক্তা। আয়ও হচ্ছে ভালোই। উজ্জ্বলায় তাঁর আসা এবং এখান থেকে শিখে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার গল্প শুনবো তাঁর নিজের মুখে-

উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীনের সঙ্গে ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত
উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীনের সঙ্গে ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত

গর্ভপাত মানসিকভাবে ভেঙে ফেলেছিল

২০০৫- এর ডিসেম্বরে আমার বিয়ে হয়। তখন অনার্স পড়ি। আমার স্বামী সে সময় ছোট একটি চাকরি করে। শ্বশুর একজন চিকিৎসক ছিলেন। বিয়ের পর গর্ভপাতের কিছু ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আমাকে যেতে হয়।

প্রতি বছর গর্ভধারণ করতাম। তবে সেটা গর্ভপাত হয়ে যেতো। আমাকে একদম বিশ্রামে থাকতে হয়েছে অনেকদিন। এ কারণে তেমনভাবে কোনো কাজ করার উদ্যোগ নিতে পারিনি কখনো। লেখাপড়া চালিয়ে গেছি এর মধ্যে।

মাস্টার্স পাশ করার পর আমার শ্বশুড় বললেন ‘বৌমা কিছু করো’। সেখান থেকেই শুরু। স্বামীও বলতেন, ‘কিছু একটা করো’। তাদের উৎসাহতেই আমার এগিয়ে চলা। প্রথমে আমি বুটিকসের ব্যবসা শুরু করি, আমার নিজস্ব ডিজাইনে। সেটা প্রায় তিন বছর নিয়মিত করি। তখনও আমি দুবার গর্ভধারণ করি এবং একেবারে বেড রেস্টে চলে যাই। ছয় মাসও পেটে সন্তান টিকে ছিল। এরপর হতো আবার গর্ভপাত। খুব মন ভেঙে যেত। বিষণ্ণতায় চলে গেছিলাম। মা হতে পারছি না। কোনো কাজে উৎসাহ পাচ্ছি না। এই রকম করে বুটিকস বন্ধ করে দিলাম। এরপর আমার স্বামী উদ্যোগ নিল ফ্রোজেন ফুডের ব্যবসা করতে। দেড় বছর সেটা করি। সেটাও ছেড়ে দিই। এরপর আমার স্বামী জোর করে আমাকে উজ্জ্বলায় ভর্তি করল। স্বামীর আগ্রহে আমি এখানে ক্লাস করা শুরু করলাম। প্রথমে নিজের জন্যই করেছিলাম। পরে ছোট করে একটি স্টুডিও স্যালন দিই। স্বামীর আগ্রহ, উৎসাহ ও সাহসেই আমি কাজটা পুরোদমে শুরু করি।

উজ্জ্বলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত
উজ্জ্বলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত

উজ্জ্বলার পরিবেশে গেলে ভালো লাগতো

আর উজ্জ্বলা আমার মানসিক শক্তি, সাহস জোগাতে অনেক সহযোগিতা করেছে। এখানে এলে, সবার সঙ্গে ক্লাস করলে মন ভালো হয়ে যেতো। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে বেশ ভালো অনুভব করতাম। বিউটিফিকেশনের প্রাথমিক পর্যায়ের সবকিছু শিখেছি প্রতিষ্ঠানটি থেকে। পেয়েছি শিক্ষককদের সহযোগিতা। উজ্জ্বলা আমাকে পুণরায় স্বাবলম্বী হওয়ার সাহস জুগিয়েছে। আমার জীবনে যেই বিরতি পড়েছিল, সেটা কাটিয়ে উঠতে ভীষণভাবে সহযোগিতা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এখানে আরেকটি বড় অবদান রয়েছে আমার বড় বোনের। সে প্রায়ই দেশের বাইরে যায় এবং খুঁজে খুঁজে খুব ভালো পন্য নিয়ে আসে আমার জন্য। যেগুলো দিয়ে আমি কাজ করি। আর আমার শ্বশুড়বাড়ি থেকে সবসময় উৎসাহ পেয়েছি কাজ করতে। এ জন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ।

উজ্জ্বলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে  ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত
উজ্জ্বলার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফারহানা খান। ছবি : সংগৃহীত

আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি

আমার সমস্ত আশা, স্বপ্ন আমার মেয়েকে ঘিরে। নিজে সাজ শেখার পর মনে হয়, তাকেও তো গুছিয়ে রাখতে পারব। নিজের মনের মতো করে সাজাতে পারব। এই ভাবনাটা আনন্দ দেয়। আমার পরিবারের মানুষও এখন আমাকে নিয়ে খুশি। তারা বলে, ‘বিউটিফিকেশনের সেক্টরে এসে আমি ভালো করেছি।’ মেয়ে একটু বড় হলে ইচ্ছে রয়েছে বড় করে স্যালন দেওয়ার। এখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, আমি একজন স্বাবলম্বী, উদ্যোক্তা নারী।

বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৬৪তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :

https://www.facebook.com/UjjwalaBD

https://www.instagram.com/UjjwalaBD/

ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments