Monday, December 9, 2024
spot_img
Homeজীবনের খুঁটিনাটিউজ্জ্বলা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে

উজ্জ্বলা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে

উজ্জ্বলা লিমিটেড, বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নারীকে যোগ্য করে তুলতে অনলাইন ও অফলাইন ক্লাসের মাধ্যমে, বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিংয়ের সব খুঁটিনাটি শেখানো হয় এখানে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজ রইল দ্বিতীয় পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাশ্বতী মাথিন

পর্ব ২ : শ্রীদেবী রাণী প্রীতি

গায়ের রং কালো হওয়ায় ভীষণ দুঃখ ছিল মেয়েটির। আয়নার সামনে নিজেকে দেখত আর ভাবত, মানুষ কত সুন্দর, ফর্সা। সে কত কুৎসিত! একটু যেন সুন্দর দেখায়, সেই আশায় রং ফর্সাকারী ভালো ক্রিমের খোঁজে কত যে দোকান ঘুরে বেড়িয়েছে মেয়েটি, তার শেষ নেই। তবে উজ্জ্বলা তাকে প্রথম আত্মবিশ্বাস দিল, ‘সে সুন্দর।’ কালো তো জগতের আলো।

উজ্জ্বলার সহপ্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন বললেন, ‘তোমার চোখ-ভ্রু কত সুন্দর! নাক-নকশার গঠন কত সুন্দর!’ আফরোজা পারভীনের ভিডিও টিউটোরিয়ালে তাকে মডেল বানালেন। সেই থেকে মডেল হওয়ার জন্য আরও অফার পেতে লাগল মেয়েটি। যার কথা বলছি, তিনি শ্রীদেবী রাণী প্রীতি। বর্তমানে উজ্জ্বলা কেয়ারের সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত। এর আগে উজ্জ্বলার অ্যাসিস্ট্যান্ট ফ্যাকাল্টি, ফ্যাকাল্টি হিসেবে কাজ করেছেন।

উজ্জ্বলা কেবল তার আত্মবিশ্বাসই বাড়ায়নি; তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতেও পাশে দাঁড়িয়েছে। টাকার অভাবে অনার্স প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের বই কিনতে পারেনি। বই ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছে। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বিউটি সেক্টরের কিছুটা কাজ শেখার পর বই কিনে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের পড়ালেখা করে। শ্রীদেবী রাণী বলেন, ‘উজ্জ্বলা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। ইন্টারমিডিয়েটের পর বাড়ি থেকে কোনো টাকা নিইনি লেখাপড়ার জন্য। টিউশনি করিয়ে সেই টাকা দিয়ে পড়তাম। সেই টাকা থেকে একটু একটু জমিয়ে উজ্জ্বলায় ট্রেনিং করি। সম্পূর্ণ কোর্স ফি একসঙ্গে দিতে পারতাম না। ধীরে ধীরে দিতাম। এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বলা ভীষণ সহযোগিতা করেছে।’

মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার প্রতি আগ্রহ কীভাবে হলো? ‘ছোটবেলায় কেউ মেকআপ করলে দেখতে ভালো লাগত। মূলত ছোটবেলা থেকেই মেকআপের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তখন মা-বাবা যে-ই হাতখরচ দিতেন, তা থেকে বাঁচিয়ে মেলা থেকে কসমেটিকস কিনতাম। ভাইবোনকে সাজিয়ে দিতাম। মূলত তারাই ছিল আমার গিনিপিগ। হা হা হা…। তবে তখন মেকআপের খুঁটিনাটি বুঝতাম না। বেইজ, কন্টোরিং বলে যে কিছু বিষয় রয়েছে, জানা ছিল না। ২০১৮ সাল থেকে উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এগুলো শিখেছি’, বলেন তিনি।

মেকআপের প্রতি আগ্রহ দেখে একজন শিক্ষক আমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি নিজে থেকেই বলেন, ‘তুমি প্রশিক্ষণ নাও, আমি টাকা দেব।’ স্যারের কথায় উৎসাহিত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণের জন্য খোঁজ নিই। কিন্তু তাদের খরচ এত বেশি যে আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। এত টাকা লাগবে, এই ভেবে পিছিয়ে যাই। এরপর উজ্জ্বলার সন্ধান পেলাম। ধীরে ধীরে কোর্স করা শুরু করি। তবে আমার বাবা-মা চাইতেন না আমি বিউটি আর্টিস্ট হই। তাদের মনে হতো, মেকআপ বা কসমেটিকস কেনার পেছনে এত টাকা নষ্ট করে কী হবে। এগুলো আমার জন্য একটা বাধা ছিলো। তবে পরে তাদের বোঝাতে সক্ষম হই, এ সেক্টরে থাকলে ভালো আয় করা যায়- জানালেন শ্রীদেবী রাণী।

মডেল শ্রীদেবী রাণী জানান, প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় উজ্জ্বলার চেয়ারম্যান আদিত্য সোম স্যার আমাকে একবার বললেন, ‘তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে, তুমি অনেক এগোতে পারবে।’ এ কথাটি আমাকে ভীষণ উৎসাহ দিয়েছিল। এখনো কোনো কাজ করতে গেলে আমি কথাটি মনে করি এবং আত্মবিশ্বাস পাই। আসলে আমি বর্তমানে যতটুকু স্বাবলম্বী হয়েছি, উজ্জ্বলা পাশে দাঁড়িয়েছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আজকে আমি স্বাবলম্বী হয়ে নিজের, পরিবারের ও দেশের ‘উজ্জ্বলা’ হয়েছি। কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে আমার। স্বামীর নাম উজ্জ্বল। সে আমাকে কাজের ক্ষেত্রে খুব সহযোগিতা করে, উৎসাহ দেয়। ভবিষ্যতে বিউটি সেক্টরে আরো ভালো কাজ করতে চাই যেন সবাই আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments