সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
মেয়েটি একদমই সাজতে জানতেন না। তবে বাবা সাজগোজ খুব পছন্দ করতেন। বাবার ইচ্ছাকে পূরণ করতে একটি স্যালনও খোলেন ঝিনাইদহে। পাশাপাশি উজ্জ্বলা থেকে বিউটিফিকেশনের ওপর সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করেন। বেশ সফলভাবেই চালাচ্ছেন সেই স্যালন।
কেবল তাই নয়, ঝিনাইদহের একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে সংবাদও পাঠ করছেন। একটি বুটিক হাউজও রয়েছে তাঁর। মাদার তেরেসা ব্লাড ব্যাংকের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। যোশর জেলার অভয় নগর থানার প্রেম বাগ ১ নং ইউনিয়ন থেকে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেন তিনি। যাঁর কথা বলছি, তিনি সুরভী ইসলাম। শক্ত এই নারীটিকে উজ্জ্বলা কীভাবে আরো দৃঢ় করেছে এই গল্পই জানবো আজ।
ঘরে বসে আয়ের জন্য বিউটি আর্টিস্ট ভালো পেশা
আমি যোশর থেকে লেখাপড়া করি। এসএসসির পরে আর লেখাপড়া শেষ করতে পারেনি। বাবা সাজগোজ পছন্দ করতেন। তবে আমি কিছুই জানতাম না। বাবার ইচ্ছাকে পূরণের জন্যও অনেকটা এই পেশায় আসা।
আমার কয়েকজন বান্ধবী বিউটি আর্টিস্ট। একটা সময় আশেপাশের মানুষের কাছে শুনতাম তালাক হওয়া নারীরা বিউটি আর্টিস্ট হয়। কথাটা খুব খারাপ লাগতো। একটি মেয়ে তালাক হওয়ার পর আরেকটি বিয়ে না করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে ক্ষতি কী? ঘরে বসে মেয়েদের কাজ করার জন্য এটি একটি সম্মানজনক পেশা।
উজ্জ্বলায় একটি মেয়ে পূর্ণ নিরাপত্তা পায়
আমার শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা বিউটিফিকেশনের কাজ শেখার ক্ষেত্রে বাধা দেয়নি। আমি স্বাচ্ছন্দে কাজটি শিখতে পেরেছি। আমার শ্বশুড় বাড়ি বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবার। উজ্জ্বলাতে কাজ শিখতে যাওয়ার আগে পার্লার ছিল আমার। বাইরের ক্লাইন্টরা যখন এসে বলতো মালিকের কাছে কাজ করাতে চাই। আমি পারতাম না। তখন মনে হলো কাজটি আমাকে ভালোমতো শিখতে হবে। উজ্জ্বলা থেকে শিখে এসে আমি এখন নিজে সাজাই। এটা আমার সফলতা। উজ্জ্বলার প্রশিক্ষকরা কোনো বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করলেও বিরক্ত হন না। এই বিষয়টা দেখেছি।
কসমেটিকসের ভেতরে দুই রকম থাকে। অরগানিক ও কৃত্রিম। উজ্জ্বলা দুটো প্রোডাক্ট দিয়েই কাজ করা শিখিয়েছে। এখন কাস্টমার যেভাবে চায়, সেভাবেই তাদের সেবা দিতে পারি। আমার পার্লারে অরগানিক প্রোডাক্টের ক্লাইন্ট বেশি হয়। অরগানিক তেল দিয়ে হট ম্যাসাজ করি। আমাদের এলাকায় চাকরিজীবী নারীদের কাছে এটি খুব জনপ্রিয়। মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় পার্লার থেকে।
উজ্জ্বলায় ঢাকার বাইরের মেয়েদের সুবিধার্থে হোস্টেল রয়েছে। সেখানে স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে একটি মেয়ে পূর্ণ নিরাপত্তা পায়।
উজ্জ্বলা আস্থা ও ভরসার জায়গা
উজ্জ্বলায় একটি গ্রুমিং ক্লাস করা হতো। এখানে শেখানো হতো স্বল্প পরিসরে ব্যবসা কীভাবে করতে হয়। ব্যবসার বিভিন্ন নিয়মগুলো সেখান থেকে শিখেছি। উজ্জ্বলাতে কোর্স ফি একসঙ্গে পরিশোধ না করলেও চলে। ভেঙে ভেঙে দেওয়া যায়। এটি খুব ভালো বিষয়। এতে যেকোনো মেয়ের শিখতেই সুবিধা হয়।
ব্যবসা প্রসারিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় পন্য বা সেবার ওপর ছাড় বা অফার দিই। আমি আগে জানতাম না, এটি কেন দেয় এবং কীভাবে দেয়। উজ্জ্বলা থেকে ইন্টার্নি করার সময় এই বিষয়টি শিখেছি। শিখেছি নতুন ক্লাইন্টদের কীভাবে আকৃষ্ট করতে হয়। এগুলো খুব সাহায্য করেছে বাস্তব জীবনে।
উজ্জ্বলার প্রত্যেক শিক্ষক খুব সুন্দর করে হাতে ধরিয়ে শিখিয়ে দেয়। এখানকার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা ম্যামকে দেখলে নিজের ভেতর উৎসাহ জাগে। যত ম্যাম রয়েছে প্রত্যেকেই যোদ্ধা। ওখানে যাওয়ার পর আরো মেয়েদের গল্প জীবনযুদ্ধের গল্প শুনতাম ।এটা আমাকে অনেক প্রেরণা জোগাতো। উজ্জ্বলা আস্থা ও ভরসার জায়গা।
উজ্জ্বলার শ্যাম্পু, হেয়ার, বডি ওয়েল ইত্যাদি কসমেটিক পন্য রয়েছে। সেগুলো বেশ মানসম্মত। আমি নিজে ব্যবহার করি এবং ক্লাইন্টদের কাছেও বিক্রি করি। মোটামুটি ভালোই সারা পাচ্ছি।
সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের জন্য কাজ করতে চাই
আমি যেই এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলাম, সেখানে গিয়ে দেখি মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরও নারীরা জানেই না, ঘরে বসেও আয় করা যায়। এই বিষয়গুলো খুবই পীড়া দিয়েছে। ভবিষতে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের বিউটিফিকেশন শেখাতে চাই। খুব ইচ্ছা রয়েছে একটি বৃদ্ধাশ্রম করার। আল্লাহ সহায় হলে সেটিও নিশ্চয়ই হবে।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ২৫তম।