সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
রাজশাহীর ছেলে মো. মেহেদী হাসান রিপন একজন নৃত্য শিল্পী। নাচ করতে গিয়ে মেকআপ নিতে হতো তাকে। নিজের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীদেরও মেকআপ করে দিতেন। একটা সময় মনে হলো, আরেকটু ভালোভাবে বিষয়টি শিখলে কেমন হয়! সে সময় আরেকজন নৃত্য শিল্পী সায়কা খাতুনের পরামর্শে দুজন মিলে উজ্জ্বলার মেকআপ কোর্সে ভর্তি হন। আর এখানেই জীবনের মোড়টা ঘুরে গেলো তাঁর। উজ্জ্বলার মাধ্যমে মেকআপের বিষয়টিতে আরো আগ্রহী হয়ে উঠলেন।
বর্তমানে নাচের পাশাপাশি বিউটিফিকেশনের বিষয়টিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বাড়িতেই তৈরি করেছেন স্যালন। ব্রাইডাল ও পার্টি মেকআপ করেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রাইডাল মেকআপ করেন তিনি। মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। বিউটি আর্টিস্ট হয়ে বর্তমানে নিজেই হয়ে উঠেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। বলছিলেন, ‘কখনো ভাবিনি বিউটি আর্টিস্ট হবো। তবে উজ্জ্বলা আমাকে নতুন পথ দেখিয়েছে। বিউটি আর্টিস্ট বিষয়টিকেও যে পেশা হিসেবে সম্পূর্ণ গ্রহণ করতে পারি, সেটির সাহস জুগিয়েছে উজ্জ্বলা।’
একবার রাজশাহীতে উজ্জ্বলার একটি কোর্স হয়। উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা আফরোজা পারভীন আপা ক্লাস নেয়। সেই কোর্স আমি অংশ নিই। অনেক নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে রুমে ঢুকে প্রথমে খুব অস্বস্তি লাগছিলো। ওখানে সবার মাঝে আমি একমাত্র ছেলে। সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। ভয় ও লজ্জা হচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর আফরোজা পারভীন আপা যখন ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন, সব সংকোচ কেটে গেলো। সেদিনই মনে হয়েছে ঢাকায় গিয়ে উজ্জ্বলা থেকে অবশ্যই বিউটিফিকেশনের ওপর কোর্স করবো। উজ্জ্বলাতে প্রশিক্ষকরা খুব কঠিন বিষয়ও সহজ করে শেখায়। দ্রুতই সেটা আয়ত্ত্ব করা যায়- জানান তিনি।
২০২২ সালে উজ্জ্বলার পক্ষ থেকে পুরুষ বিউটি আর্টিস্ট হিসেবে ‘অদম্য উজ্জ্বলা’ সম্মাননা পান তিনি। সেই অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এটা আমার জীবনের এক অনন্য পাওয়া। কখনো ভাবতেও পারিনি এমন একটি সম্মান পাবো। উজ্জ্বলার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।’
উজ্জ্বলার শেখানোর মান বেশ ভালো। এখানকার শিক্ষার্থীদের বিউটি ইন্ডাসট্রিতে একটি আলাদা কদর রয়েছে জানিয়ে মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি আগেও মেকআপ করেছি। তবে সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝতাম না। আইব্রো ঠিকমতো আঁকতে পারতাম না। চোখের সঙ্গে কেমন শেপ দিলে ভালো লাগবে, বুঝতাম না। কন্টোরিং কী, টি জোন কী- বুঝতাম না। এখন বুঝি। কোন চোখে কোন আইশ্যাডো মানাবে, চোখ অনুযায়ী আইলাইনার কতটা টেনে দিবো, কিছুই বুঝতাম না। সবই শিখেছি উজ্জ্বলার কাছ থেকে। উজ্জ্বলার কাছ থেকে শেখার পর আরো পরিপূর্ণ হয়েছি।’
সাধারণত আমাদের দেশে একজন পুরুষ বিউটি আর্টিস্টকে সামাজিক বাধার মুখোমুখি হতে হয়। পুরুষ বিউটি আর্টিস্ট হবে , বিষয়টি যেন কোনোভাবেই মানুষ মেনে নিতে চায় না। এসব প্রসঙ্গে কথা উঠতেই তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যখন বউ সাজাতে যাই, অনেক নেতিবাচক কথা শুনতে হয়। বউয়ের পরিবার হয়তো বলে না। বরং সাজ দেখে হয়তো প্রশংসাই করে। আশেপাশের মানুষ বলে। তবে এসব ক্ষেত্রে সবসময় উজ্জ্বলার কথা মনে করি। এখানকার প্রশিক্ষকরা বলতেন, সারাবিশ্বে অনেক ছেলে মেকআপ আর্টিস্ট রয়েছে। তবে আমাদের দেশে এখনো সামাজিকতার কারণে সংখ্যাটি কম। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এ দেশেও ছেলে মেকআপ আর্টিস্টের সংখ্যা বাড়া জরুরি। উজ্জ্বলা আমাদের শিখিয়েছে, মানুষ এগিয়ে যাওয়ার সময় ছয় জন ইতিবাচক কথা বলে। আর চার জন নেতিবাচক কথা বলে পিছনে টেনে ধরার চেষ্টা করে। সেটা মাথায় নিলে চলবে না। এগিয়ে যেতে হবে।’
আগামী দিনে উজ্জ্বলার সঙ্গে থাকতে চাই। আশা করি, উজ্জ্বলাও এভাবে আমাদের পাশে থাকবে। নিজেকে আরো ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, যেন উজ্জ্বলার শিক্ষার্থী হিসেবে একটি বিশেষ পরিচিতি পেতে পারি- জানান তিনি।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৩৩তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/