সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় আহনা ইসলাম নিলার। এরপর সংসার-সন্তানের চাপের কারণে লেখাপড়াটা আর হয়ে উঠেনি। সন্তান হওয়ার সাত বছর পর স্বামী বিদেশে কাজের জন্য চলে যায়। সে সময় খুব একা লাগতো তার। কী করা যায় ভাবছিলেন? ছোটবেলা থেকে সাজগোজের প্রতি যেহেতু একটু আগ্রহ ছিল, তাই এর ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করলেন।
উজ্জ্বলা থেকে বিউটিফিকেশনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে নিজেই একটি স্যালন খুলেছেন। ঢাকার কামরাঙ্গীচরে অবস্থিত এই স্যালন থেকে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। তাঁর চলার পথের বাধা-বিপত্তি এবং সহযোগী হিসেবে উজ্জ্বলার ভূমিকার কথা জানবো আজ।
অনেক জায়গায় কাজ শিখতে যাই, তবে উজ্জ্বলাকেই ভালো লাগে
স্বামী বিদেশে চলে যাওয়ার পর সময়টাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছিলাম। খুব নিঃসঙ্গ লাগতো তখন। লেখাপড়াটা তো পুরোপুরি শিখতে পারিনি! অনেকেই কাজ করতে নিষেধ করেছে। বলেছে, ‘কী দরকার বাচ্চা রেখে প্রশিক্ষণ নেওয়ার? তোমার তো কাজ করার প্রয়োজন নেই।’ কিন্তু আমি সীদ্ধান্তে অটল ছিলাম।
আমার ছোট বোনের একটি পার্লার ছিল। সেখানে কিছুদিন কাজ শিখি। কিন্তু তখন ভালোমতো শিখতে পারিনি। এরপর খুঁজছিলাম কোথায় একটু ভালোভাবে শেখা যায়। অনেক জায়গা ঘুরেছি। কোনো জায়গা ঠিক মনমতো হচ্ছিলো না। সম্পূর্ণ কোর্স শেখাতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা চাইতো তারা। এটা আমার জন্য বহর করা সম্ভব ছিল না। এরপর একদিন মোহাম্মদ পুরে রেড বিউটি স্যালনে যাই। তারা আমাকে উজ্জ্বলার খোঁজ দেয়। এরপর উজ্জ্বলায় এসে কথা বলে খুব ভালো লাগে। এখানেই প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। যদিও আমার সন্তান রেখে বাসা থেকে আসা-যাওয়াটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। তবে উজ্জ্বলার প্রতি ভীষণ টান ছিল আমার। সবসময় ভেবেছি কাজটা আমি শিখবোই।
উজ্জ্বলা সাহস ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে
আমি অন্য জায়গায় তিন বছর কাজ শিখি। কিন্তু নিজে স্যালন চালাতে পারবো, সেই আত্মবিশ্বাস পাইনি। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ শেষে সেই আত্মবিশ্বাস ও সাহস পাই। এখানে খুব সূক্ষ্মভাবে, ধরে ধরে কাজ শেখায়। না বুঝলে প্রশিক্ষকরা কখনো বিরক্ত হন না। তারা সবসময় বুঝিয়ে দিতেন। এখান থেকে কাজটা খুব ভালোভাবে শিখতে পেরেছি। এখানের সব শিক্ষকরাই খুব ভালো ছিলেন। আমাদের সঙ্গে খুব আপন হয়ে, বন্ধুর মত মিশতেন। সুখ-দুঃখের সব কথাই তাদের সঙ্গে শেয়ার করা যেতো। তাদের কারণে আজ আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। উদ্যোক্তা হতে পেরেছি।
অনেকেই ঈর্ষা করে
যারা আমাকে কাজ করতে নিষেধ করতো, তারা আমি সফল হওয়ার পরও ঈর্ষা করে। আমি আয় করছি, এটা তাদের ভালো লাগে না। আসলে সমাজের অনেকেই থাকে যারা সব কিছুতেই নেতিবাচক বিষয়টি আগে খুঁজে বের করে। শুরুতে কষ্ট পেতাম এসব ভেবে। তবে এখন আর পাই না। এই মানসিক শক্তিটাও উজ্জ্বলার কাছ থেকে পেয়েছি। তারা শিখিয়েছি কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশেও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। উজ্জ্বলা থেকে আমি সেরা-১০ বিউটি আর্টিস্ট হওয়ার সম্মাননা পেয়েছি। এটা আমার চলার পথে শক্তি জুগিয়েছে। সেরাটন হোটেলে এই সম্মাননা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চে মন্ত্রী ও অভিনয় শিল্পীরা ছিলেন। তাঁদের হাত থেকে পুরষ্কার পাই। পুরষ্কার নিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। এই দিনটি আমার কাছে ভীষণ স্মরণীয়।
প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে
উজ্জ্বলার শিক্ষকদের দেখে আমার খুব ভালো লাগতো। কত সুন্দর করে তারা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতেন। আমিও তাঁদের মতো প্রশিক্ষক হতে চাই এবং নিজের কাজ দিয়ে আরো এগিয়ে যেতে চাই। নিজের কাজ দিয়ে যেন উজ্জ্বলার মান ধরে রাখতে পারি, এটাই চাওয়া।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৩১তম।