অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া
ঈদ আমাদের ঐতিহ্যবাহী আনন্দ উৎসব। এই সময় আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সমাগম হয় বাড়িতে। ঈদে ঘরের সাজ-সজ্জায় একটু পরিবর্তন আসলে কিন্তু ভালোই হয়। ঘর সাজালে, নতুন পরিবেশ তৈরি হয়; সব প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে এই জন্য খুব যে ঝক্কি পোহাতে হবে, তা কিন্তু নয়। সামান্য কিছু পরিবর্তনেই ঘর হয়ে উঠতে পারে বৈচিত্র্যময়।

১. কীভাবে শুরু করব?
ঘরকে সাজিয়ে তোলার আগের কাজটা হলো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। অপরিষ্কার ঘরকে সাজালেও সুন্দর করে তোলা যায় না।
# শুরুতে ঝুলঝাড়ু দিয়ে ঘরের ঝুল পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
# ফ্যানের ব্লেডে ময়লা থাকলে, পরিষ্কার করে নিন।
# বুক শেলফে বই এলোমেলো থাকলে গোছাতে হবে।
# মেঝের টাইলসে ময়লা থাকলে পরিষ্কার করে নিন।

২. বৈচিত্র্য আনার উপায়—
# সাধারণত ঈদে বা এই রকম কোনো বিশেষ দিনে ব্যবহার করার জন্য কুশন কভার, টেবিল কভার, বিছানার চাদর, পর্দা ইত্যাদি আলাদা এক সেট তুলে রাখা হয়। ঈদের কয়েকদিন আগেই এগুলো বের করে দেখতে হবে ঠিকঠাক রয়েছে কি না, কোনো রকম ময়লা দাগ পড়েছে কি না, পোকার উপদ্রব হলো কি না। প্রয়োজনে এগুলো ধুয়ে, আয়রন করে ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে।
# খুব ভালো হয় ঘরের রঙ বদলে ফেলা গেলে। এবারের ঈদুল আযহায় তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি থাকবে। তাই হালকা রঙকে প্রাধান্য দিলে ভালো হয়। শিল্পকলার ভাষায় রঙকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়- উষ্ণ ও শীতল। যেসব রঙে লাল ও হলুদের প্রভাব রয়েছে, সেগুলো উষ্ণ। আর নীলের প্রভাব রয়েছে এমনগুলো শীতল। এই ধরনের রং মনে প্রশান্তি আনে। তাই ঘরের বেশিরভাগ অংশে শীতল রং ব্যবহার করে, ছোট অংশে উষ্ণ রং ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- কুশন কভার, টেবিলক্লথ, এমনকি কার্পেটও উষ্ণ রঙের হতে পারে।
# এ ছাড়া প্রকৃতির শীতল ছোঁয়া আনার জন্য ঘরের ভেতর কিছু গাছ নিয়ে আসতে পারেন। মানি প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা- এ ধরনের ইনডোর প্ল্যান্টগুলো ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।
৩. একটু অন্যরকম কিছু—
# ঘরের সাজে বৈচিত্র্য আনতে, দামী জিনিস ব্যবহার করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বুদ্ধি খাটিয়ে একটু অন্যরকম কিছু করুন। এই ক্ষেত্রে দেশীয় বা ঐতিহ্যবাহী পন্য ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে তো মাটির তৈরি, বাঁশের তৈরি নানা ধরনের ঘর সাজানোর উপাদান কিনতে পাওয়া যায়। যেগুলো দামে সস্তা। ঈদ উপলক্ষে এই ধরনের কিছু জিনিস কিনে ঘরে সাজানো যেতে পারে।
# আর খরচ বাড়াতে না চাইলে, নিজেদের হাতে তৈরি জিনিস ব্যবহার করা যায়। নিজেরাই কারুশিল্প তৈরি করে ঘরকে নতুন করে সাজিয়ে ফেলতে পারি। ঈদ উপলক্ষে একটা দেয়াল অথবা বাসগৃহের একটা কর্নার সাজিয়ে তোলা যায়। বিভিন্ন রঙের কাগজ কেটে ফুল বা বিভিন্ন মোটিফ তৈরি করে সেই জায়গাটিকে সাজাতে পারেন। ঈদ মুবারক লেখা কার্ড তৈরি করে সাজানো যেতে পারে। এখন খুব কম দামে নানা রঙের মরিচ বাতি পাওয়া যায়। ঈদ উপলক্ষে না হয় সেরকম কিছু বাতি কিনেই কর্নারটি সাজিয়ে ফেলুন। আর এই ক্ষেত্রে বাড়ির ছেলেমেয়েদের কাজে লাগিয়ে দিতে পারেন। সবাই মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নিলে আনন্দ হবে, নতুনত্বও আসবে।
# এ ছাড়া ফেলে দেবার মত জিনিস (প্লাস্টিক, পুরোনো গহনা, কলম ইত্যাদি) দিয়েও অনেক শিল্পকর্ম তৈরি করা যায়। আজকাল কোনো কিছুই ফেলনা নয়। একটু মাথা খাটিয়ে এসব জিনিস দিয়ে নানা ধরনের শোপিস তৈরি করে ফেলা যায়। এবারে ঈদ উপলক্ষে এসব জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়ে একটু বৈচিত্র্য আনতেই পারি।

৪. ফুলের ব্যবহার—
# বাড়িতে একটা আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে, ফুল ঘরে রাখা খুব কার্যকর। গোলাপ, জুঁই, রজনীগন্ধা এসব ফুলের গন্ধ খুব সুন্দর, ঘরকে সুগন্ধিযুক্ত করে তোলে। অনেকে সুগন্ধি মোমবাতি ব্যবহার করেন। এগুলোও বেশ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে।
৫. ঘর সাজানোয় কিছু পরিবর্তন—
ঘরে যেসব আসবাবপত্র বা অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে সেগুলো একটু এদিক ওদিক করে নিয়ে নতুনভাবে সাজালে নতুনত্বের সৃষ্টি হয়। ঈদ উপলক্ষে আমরা এ কাজটা করতে পারি। অল্প কিছু পরিবর্তনের ফলে ঘরকে অনেক সুন্দর মনে হয় আর মনও খুব ভালো হয়ে ওঠে।
এভাবে সহজ কিছু কৌশলের সাহায্যে এই ঈদের আগেই আমরা ঘরে বৈচিত্র্য নিয়ে আসতে পারি।
লেখক
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনরশিপ বিভাগ,
গভ. ককেজ অব এপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স,
(প্রাক্তন গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজ)
ঢাকা।