শাশ্বতী মাথিন
সেমাই, পায়েস, জর্দা, পোলাও, কোরমা নানা পদের টক-ঝাল-মিষ্টি খাবারের আয়োজন হয় ঈদের সময়টায়। নিজের বাড়িতে তো খাওয়া হয়ই, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি গেলেও কিছু না কিছু মুখে দেওয়াই লাগে। যেহেতু এটি ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ, তাই একমাস সিয়াম সাধনার পর হঠাৎ করে এতো খাবার শরীরের বিপত্তি ঘটাতে পারে।
বদহজম, পেট ফোলাভাব, বমি, বমি বমি ভাব, এসিডিটি ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছে, তাদের ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত মিষ্টি, তেল-চর্বি ও মসলা জাতীয় খাবার অসুবিধা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই খাবার-দাবারের বিষয়ে কিছুটা সচেতন হতেই হবে। তাহলেই ঈদের আনন্দটা শতভাগ উপভোগ করা যাবে।
‘ঈদের খাবার যেহেতু ভুরিভোজ হয়, তাই শুরু থেকেই পরিকল্পনা করা দরকার। দিনের মূল খাবার, অর্থাৎ দুপুর ও রাতের খাবার কোথায় খাবেন, আগেই ঠিক করুন। অন্য দাওয়াতগুলোতে যথাসম্ভব কম খান’, বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।
ঈদের খাবারের সচেতনতার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ আরেও বলেন, ‘যাদের বয়স কম এবং শারীরিক জটিলতা নেই, তারা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারে। শুধু অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যারা মাঝবয়সী বা বয়োবৃদ্ধ এবং যাদের অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো, জানিয়ে পপুলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি বলেন, ‘মিষ্টি খেতে হলে চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে ফলের রস বা ফল দিয়ে তৈরি কোনো খাবার খেতে পারেন।’
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে এবং উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের বেলায় বেশি চর্বিজাতীয় খাবার (খাসি বা গরুর মাংস) না খাওয়াই ভালো। এতে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হার্টের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
একবেলা অনেক না খেয়ে বারে বারে খাবার খেতে হবে। সারাদিনে চার থেকে পাঁচ টুকরো গরু বা খাসির মাংস খাওয়া যেতেই পারে। মাংসের পরিবর্তে সবজি ও মাছের কাবার তৈরি করতে পারেন। আর কোনো বেলায় ভারি খাবার খেয়ে ফেললে ছয় থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
‘যেহেতু এবার গরমের সময় ঈদ পড়ছে, তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন পানিশূন্যতা না হয়। দইয়ের লাচ্ছি, লেবুর শরবত, পানি ইত্যাদি বেশি খান। চা, কফি এই সময় না খাওয়াই ভালো। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য, পানিশূন্যতা ও বদহজমের সমস্যা বাড়ে’, জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশি।
কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিনজাতীয় খাবার (যেমন মাছ-মাংস) অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এসব রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্যই ঈদের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আবার ঈদে অতিরিক্ত খেয়ে পেট জ্বালা করা, পেট ফোলাভাব আর পেপটিক আলসার খুব সাধারণ সমস্যা। এসব সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। গোগ্রাসে না খেয়ে সময় নিয়ে চিবিয়ে খান। রাতে খাবারের পরপরই ঘুমাতে যাবেন না। কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে নিন। খাবার খাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর ঘুমাতে যান।’