সাদিয়া ইসলাম
সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্য – সবারই কাম্য। আর এই দুটোকে একই ঝুলিতে নিয়ে যেই চিকিৎসাশাস্ত্র কাজ করে, সেটি আয়ুর্বেদ। একে কেবল একটি কার্যক্রম বললে ভুল করা হবে। মূলত, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষের মাটিতে এই চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি হয়। ‘আয়ুর্বেদ শাস্ত্র’-কে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসা ও খাদ্যের প্রাচীন বিজ্ঞান বলা হয়। আয়ুর্বেদ শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দের সংযোগে তৈরি। একটি হলো, ‘আয়ুশ’, অর্থাৎ ‘জীবন’। দ্বিতীয়টি হলো, ‘বেদ’ অর্থাৎ ‘বিজ্ঞান’। এক কথায় একে ‘জীবনের বিজ্ঞান’ বলা চলে।
উনিশ শতকের প্রথম কয়েক দশকে পাশ্চাত্য চিকিৎসা গবেষকদের মধ্যে ভারতবর্ষের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। প্রাচ্য বিশারদগণ শক্তভাবে মত দেন, চিকিৎসাবিদ্যার এক প্রাচীন ব্যবস্থা ভারতে রয়েছে, যা অনুসন্ধানযোগ্য। পাশাপাশি এই জ্ঞান পুণরাবিষ্কারের জন্য প্রাচীন সংস্কৃত পান্ডুলিপিগুলো গবেষণা করে দেখার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
মূলত, আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগ নিরাময় বা প্রতিকারের চেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন খাবার ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।
সুস্বাস্থ্যের জন্য আয়ুর্বেদ তো অতুলনীয়। তবে একদম রাসায়নিকমুক্তভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে সৌন্দর্য বাড়াতেও আয়ুর্বেদের অনন্য।
আয়ুর্বেদে রূপচর্চা
বর্তমান সময়ে সৌন্দর্য বাড়াতে আমরা এমন সব পন্য ব্যবহার করি, যা রাসায়নিকে ভরপুর। চটজলদি সৌন্দর্য বাড়াতে এসব পন্যের ব্যবহার করা হয় ঠিকই, তবে দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপে এর ক্ষতিকর প্রভাবও পড়ে। মূলত, আয়ুর্বেদিক রূপচর্চার উপকরণগুলো প্রাকৃতিক নানা উপাদান থেকে নেওয়া হয়। এসব উপকরণের পার্শ্বপতিক্রিয়া কম থাকে; চিকিৎসাপদ্ধতি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে।
চন্দন, বুনো হলুদ, নিম, শিকাকাই, অ্যালোভেরা, জাফরান, সবুজ শাকসবজি, মশলা, বাদাম, বিভিন্ন তেল, ব্রাহ্মী, শ্বেতকূটজা, ত্রিফলা, হরীতকী, বহেড়া, দুধ, টকদই ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপকরণই ব্যবহার হয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়। এসব উপাদান ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্নভাবে কাজ করে। কোনোটি কাজ করে প্রাকৃতিক পরিষ্কারক হিসেবে। কোনোটি বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমায়। কোনোটি আবার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়।
যেহেতু সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য- দুটোকে পাশাপাশি নিয়েই আয়ুর্বেদ চলে, তাই প্রয়োজনে খাদ্যতালিকার পরিবর্তন করতে বলা হয়। পাশাপাশি যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদির মাধ্যমে সমন্বয় করা হয় চিকিৎসাব্যবস্থা।
তবে একজন একটি পন্থায় উপকার পাচ্ছে বলে, সবাই একইভাবে উপকার পাবে বিষয়টি এমন না-ও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার সমস্যা ও অবস্থা বুঝে সার্বিকদিক বিবেচনা করেই সৌন্দর্যচিকিৎসা দেওয়া হয়।
মূলত, আয়ুর্বেদ চিকিৎসাপদ্ধতি দেহ ও মন- দুটোরই একত্রে সৌন্দর্য ও সুস্থতা চায়। তবে রপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াই ভালো। এতে উপকারগুলো বেশি পাওয়া যাবে এবং যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
লেখক : আয়ুর্বেদ রূপ বিশেষজ্ঞ
ওউনার অ্যান্ড সিইও
সাদিয়া আয়ুর্বেদা বিউটি সলিউশনস
মিরপুর ১১ ( পূরবি সিনেমা হলের পূর্ব পাশে), টপ টেন বিল্ডিং, লিফ্ট- ৯
ফোন : ০১৭০৬-৯৯৩২৯৫