সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায় কামরুন নাহার মৌ-এর। পরের বছরই সন্তান। সন্তান-সংসার সামলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হন। পাশাপাশি এমবিএ করেন। লেখাপড়াটা চালিয়ে গেলেও সব সামলে চাকরি করা আর হয়ে উঠেনি। খুব মন খারাপ হতো। ভাবতেন, লেখা-পড়াটা কাজে লাগাতে পারলেন না।
তবে মনে ছিল, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, নিজেকে স্বাবলম্বী করে তোলার অদম্য জেদ। সেই সুযোগটিই তাকে করে দেয় উজ্জ্বলা। উজ্জ্বলা থেকে বিউটিফিকেশনের ওপর কোর্স শেষ করে বর্তমানে ঢাকার মহাখালিতে ‘টাচ অ্যান্ড গ্লো’ নামে ছোট পরিসরে একটি বিউটি স্যালন খুলেছেন। আয়ও হচ্ছে ভালোই। এখন তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন একজন স্বাবলম্বী নারী ও উদ্যোক্তা। কামরুন নাহার মৌ-এর উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পেছনের গল্পই শুনবো তাঁর মুখ থেকে।
কেন আমি উদ্যোক্তা হলাম?
লেখাপড়া শেখার পরও সংসার সামলাতে গিয়ে, চাকরি করতে না পেরে মনটা খুব খারাপ হতো। সংসার-সন্তান সামলাতাম ঠিকই, তবে খুব হতাশ লাগতো। এক পর্যায়ে মনে হলো, আমি তো সাজতে পছন্দ করি এবং সাজাতেও পছন্দ করি। ছোটবেলায় বান্ধবী বা আত্মীয়স্বজনকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সাজিয়ে দিতাম। তাহলে এটাকেই কেন পেশা হিসেবে নিচ্ছি না? বিউটিফিকেশনের কাজ শিখে স্যালন দিলে তো আমি উদ্যোক্তা হতে পারবো এবং স্বনির্ভরও হবো। সংসার ও কাজ দুটোই একসঙ্গে করতে পারবো। কাজ না করতে পারার মানসিক যে অশান্তি রয়েছে, সেটিও দূর হবে।
এরপর এমন একটি জায়গা খুঁজতে থাকি, যেখানে কম খরচে বিউটিফিকেশনের কাজ শেখা যায়। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উজ্জ্বলার অ্যাড দেখি। উজ্জ্বলার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভালো লাগে। সেখানে ভর্তি হয়ে যাই। এটা ২০১৯ সালের কথা। আর এখন তো এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিউটিফিকেশনের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করে নিজেই স্যালন দিয়েছি। হয়েছি উদ্যোক্তা।
উজ্জ্বলা জীবন বদলে দিয়েছে
উজ্জ্বলায় শিখতে এসে যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেলাম। আমার ভেতরে যেই মনটা মরে গিয়েছিল, সে যেন আবার জেগে উঠলো। এখানকার পরিবেশ, কাজ শেখানোর ধরন, ফ্যাকাল্টিদের করা মানসিক সহযোগিতা আবার বাঁচিয়ে তুললো। প্রতিষ্ঠানটি আমার জীবনকে আসলে ভীষণভাবে বদলে দিয়েছে। আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। এখন আমি আমার স্বপ্নের সঙ্গে থাকতে পারছি।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, যখন কাউকে সাজাই, তারা জিজ্ঞেস করে কোথা থেকে সেজেছো? যার কাছ থেকে শিখেছো, সে খুব ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে শিখেছে। অথবা খুব ভালো বিউটি আর্টিস্টদের কাছ থেকে শিখেছে। তখন আমার উজ্জ্বলার শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে। আর আফরোজা ( আফরোজা পারভীন, উজ্জ্বলার সহ প্রতিষ্ঠাতা) ম্যামের সুন্দর হাসিমাখা মুখটা ভেসে উঠে। তখন মনে হয়, আমি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে শিখেছি, সেটি উজ্জ্বলা। উজ্জ্বলায় শিখতে পেরে গর্ববোধ করি।
নারীদের উদ্যোক্তা হওয়া ভালো
একজন নারীকে প্রকৃতগতভাবে সন্তানের জন্ম দিতে হয়। আর সামাজিকভাবে এখনো একটা সংসারে অর্ধেকের বেশি কাজ করতে হয়। এই জন্য অনেকে চাইলেও চাকরি করতে পারে না বা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে না। তবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠা যেকোনো মানুষের জন্যই খুব জরুরি। আর এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যারা চাকরি করতে পারছে না বা চাকরি করছেও, সবারই নিজের একটি ব্যবসা থাকা প্রয়োজন। নারীর জন্য উদ্যোক্তা হওয়া ভালো। নিজস্ব ব্যবসা থাকলে, পরিবার ও কাজের জায়গা দুটোতেই সুবিধামতো সময় দেওয়া যায়। আর মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে। তাই বিউটি সেক্টরে কাজ করার চাহিদাও বাড়ছে। এই সেক্টরে কাজ শিখে একজন নারী অনায়াসেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন।
অভাবি মেয়েদের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করতে চাই
ভবিষ্যতে নিজের স্যালনকে আরো বড় করতে চাই। পাশাপাশি অভাবি মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে চাই, যেন তারা স্বাবলম্বী হয়ে কিছু করতে পারে। নিজে যেমন উদ্যোক্তা হয়েছি, তেমনিভাবে চাই অন্যরাও উদ্যোক্তা হোক; ‘বিউটি আর্টিস্ট’ পেশায় আসুক।
বি : দ্র : বাংলাদেশের বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উজ্জ্বলা লিমিটেড। উজ্জ্বলায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সংগ্রাম করে সাফল্য অর্জন করেছেন, এমন কয়েকজন নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাতকাহনের ধারাবাহিক পর্ব চলছে। এই পর্বটি ছিলো ৬০তম। উজ্জ্বলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.facebook.com/UjjwalaBD
https://www.instagram.com/UjjwalaBD/
ফোন : ০১৩২৪৭৩৪১৫৭