সাতকাহন২৪.কম ডেস্ক
আবেগ, মানবমনের জটিল অনুভূতির নাম। সুখ, আনন্দ, দুঃখ, হাসি, উচ্ছাস, বেদনা, রাগ- এসবই আবেগ। আবেগহীন হয়ে একেবারে রোবট হয়ে যাওয়াটা যেমন মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী নয়, তেমনি এর অতিরঞ্জিতাও অস্বাস্থ্যকর।
এর অতিরঞ্জকতা মানুষকে নিচের দিকে টেনে ধরে এবং মানুষকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল করে তোলে। তখন কষ্টটা নিজেরই বাড়ে। তাই এর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। বলা হয়, আবেগের নিয়ন্ত্রণ একটি শিল্পের মতো। একে কাবু করতে পারলে সব ক্ষমতা যেন আপনার হাতের মুঠোয়। নিচের উল্লেখিত ছয়টি কৌশল মেনে হয়ে উঠুন আবেগ নিয়ন্ত্রণের গুরু।
কাউকে অতিরিক্ত ভালোবাসবেন না
ভালোবাসা ভীষণ সুন্দর একটি অনুভূতি। এটি মানুষের মধ্যকার সংযোগকে দৃঢ় করে। জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় এর মাধ্যমে। তবে অতিরিক্ত ভালোবাসা ও আসক্তি, নিজের উপরেই বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে। অতিরিক্ত ভালোবাসা আমাদের বিচার-বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয়। এর কারণে যেই অস্থিরতার সৃষ্টি হয়, সেটি বিষণ্ণতা তৈরি করে। আশা বাড়ায়। তাই নিজের মনকে সামলান। নিজেকে নিজেই শক্তিশালী করুন। আর এতে সম্পর্কও সুন্দর থাকবে।
বেশি সহমর্মি হবেন না
সহমর্মিতা মানবমনের অত্যন্ত বড় একটি গুণ। এটি মানুষ হিসেবে আপনাকে অত্যন্ত বড় করে। তবে বেশি সহমর্মি হওয়া মানসিক, আবেগীয় ও বাস্তবিকভাবে আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। না, আপনাকে মানুষ হিসেবে বর্বর হতে বলছি না। মানুষ হিসেবে আপনি অন্যের প্রতি সহমর্মি হবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো দূরত্ব বজায় রাখতে শিখুন। এতে অন্য কেউ আপনার আবেগকে সহজে ব্যবহার করতে পারবে না।

টক্সিক মানুষকে ‘না’ বলুন
যারা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেসব টক্সিক মানুষকে ‘না’ বলতে শিখুন। নিজের দেয়াল নিজেই তুলে দিন। আপনি কতটুকু নেবেন, কতটুকু নয়- সেগুলো কিন্তু আপনার ওপরই নির্ভর করছে। প্রয়োজনে একা থাকতে শিখুন। তবে এসব মানুষ থেকে দূরে থাকুন। নিজের সম্মান নিজে বজায় রাখুন। দূরত্ব তৈরি করুন।
নিরব থাকতে শিখুন
সবকিছুতেই প্রতিক্রিয়া জানাতে যাবেন না। নিরব থাকতে শিখুন। শুনুন বেশি, বলুন কম। পর্যবেক্ষণ করুন। সব অনুভূতি প্রকাশ করতে যাবেন না। সব অনুভূতির জন্য শ্রোতার প্রয়োজন নেই। একটু ভেবে দেখবেন, নিরবতা মানুষকে শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান করে। এটি আত্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি। যারা বেশি পর্যবেক্ষণ করে এবং নিরব থাকে, তাদের সীদ্ধান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক হয়।
মানসিক দেয়াল তৈরি করুন
ইংরেজিতে একটি কথা রয়েছে, ‘সেট বাউন্ডারি’ । অর্থাৎ দেয়াল তুলে দেওয়া। যে কাউকে জীবনে প্রবেশের সুযোগ দেওয়াটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। যারা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে অস্থিতিশীল করে দেয়, আপনাকে অসম্মানিত করে, তাদের জন্য দেয়াল তুলে দিন।
সব টেক্সের ম্যাসেজ দ্রুত দেবেন না বা সবার সব কথা সবসময় রাখতে যাবেন না। যেটা আপনার ভালো লাগছে না, সেখানে ‘না’ বলুন। অবশ্য, সেই জন্য মিথ্যা বলবেন, তা নয় বা অন্যকে অপেক্ষায় রাখবেন, সেটিও নয়। নিজের প্রতি ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সৎ হোন। পৃথিবীকে বুঝিয়ে দিন, আপনার জীবন, সময়, আত্ম-সম্মান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে দুঃখ, বিষণ্ণতা থেকে অনেকটাই মুক্তি দেবে।
নিজের লক্ষ্যকে গুরুত্ব দিন
নিজের কাজ ও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিন। মনে রাখবেন, নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার মানে এই নয় যে আপনি স্বার্থপর। এটি আসলে নিজেকে শক্তিশালী করতে এবং নিজের বৃদ্ধির জন্য জরুরি।
জীবন সুন্দর, তবে এক ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রেও। তাই সুন্দর মূল্যবোধগুলো অবশ্যই থাকবে, তবে নিজের ভেতর যোদ্ধার শক্তি ধরে রাখাটাও জরুরি।
সূত্র : ওয়ার্ডস অব উইজডোম