শাশ্বতী মাথিন
মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশ ২০২৩–এর দ্বিতীয় রানারআপ ইয়াসিন আহমেদ সকালকে বিউটিফিকেশনের মাধ্যমে নতুনভাবে রূপান্তর করেছেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিউটি আর্টিস্ট ও রেড বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী আফরোজা পারভীন। এই লুকে আফরোজা পারভীন মডেল সকালকে দিয়েছেন সম্পূর্ণ নারীরূপ।
এ উপলক্ষ্যে আজ সোমবার বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে রেড বিউটি স্টুডিও ও স্যালনে এক প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
আফরোজা পারভীন সকালকে সাজিয়েছেন চারভাবে। চারটি লুক তিনি তৈরি করেছেন। একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নতুন করে সম্পূর্ণ নারীরূপে সাজানোর বিষয়ে আফরোজা পারভীন বলেন, ‘মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশে সকালকে দেখে আমার মনে হয়েছে ওর মধ্যে বোল্ডনেস রয়েছে, বিউটি রয়েছে। আর যে নারীসত্তাকে আমরা দেখতে চাই, সেই খাঁটি নারীসত্তা রয়েছে সকালের মধ্যে। অথচ এটা প্রকাশ করা তার জন্য কঠিন। জীবনের যে যুদ্ধ আমরা সবাই করি, সেও করে। পাশাপাশি নারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার আলাদা একটা লড়াই তাকে চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে। এ জন্যই আমি চেয়েছি সকালকে নতুন সকালে রূপান্তর করতে।’
‘এটা বলা যেতে পারে সকালের নারীত্বের উদযাপন। এ ক্ষেত্রে আমার নিরীক্ষা করার ইচ্ছা বেশি কাজ করেছে। তবে আমি অবশ্যই মাথায় রেখেছি নারী হয়ে ওঠার পথে সকালের সংগ্রাম ও ঐকান্তিকতা। তাই সকালকে নতুন রূপে, যথার্থ নারী হিসেবে তুলে ধরার কাজটা অনেকখানি সহজ হয়েছে মনে করি,’ বলেন আফরোজা পারভীন।
আফরোজা পারভীন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গভীর অভিনিবেশে সকালকে দিয়েছেন এক নতুন রূপ। সাজানোর পর নিজের চেহারা দেখে অভিভূত সকাল। বলেছেন, ‘আমি না হাসলেও আমার ঠোঁটগুলো হাসছিল। আমাকে মনে হচ্ছিল একজন রাজকন্যা।’
তাঁর ভেতরের নারীত্বকে এত সুন্দর করে প্রকাশ করা জন্য আফরোজা পারভীনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সকাল বলছেন, ‘তার স্পর্শ আমাকে আমার মায়ের স্পর্শ মনে করিয়ে দিয়েছে। যে সকালের স্বপ্ন আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, সেই সকাল হয়ে উঠতে পেরেছি আফরোজা পারভীনের কল্যাণে। তার ছোঁয়ায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি।’
শিল্পী হিসেবে আফরোজা পারভীন মনে করেন, সকালের মতো আরও সকালকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনের তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
সকালের পথচলা
বাংলাদেশের সমাজে একজন ট্রান্সজেন্ডারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার যুদ্ধটা কঠিন। কেউ কেউ সেটা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ইয়াসিন আহমেদ সকাল তাদেরই একজন। সকাল মডেলিং করেন। পাশাপাশি তিনি শান্ত-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ছেন। তিনি সব সময়েই চেয়েছেন তার ভেতরের নারীসত্তার প্রকাশ। তবে সেটা একটা সময় পর্যন্ত সম্ভব হয়নি বলতেই হবে। সমাজের অন্যদের বোঝানো যতটা কঠিন, নিজের পরিবারের সদস্যের বোঝানো কম কঠিন নয়। এরপরও দুরূহ এক পথ তিনি পার করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। এই জন্যই আজকে দেখা মিলেছে এক নতুন সকালের।
এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে সকালের অদমনীয় মনোভাব, সাহস আর ইচ্ছা। এ বছর অনুষ্ঠিত মিস এভারগ্রিন বাংলাদেশ ২০২৩–এ তিনি দ্বিতীয় রানারআপ। এই প্রতিযোগিতা থেকে তার অর্জন আর অভিজ্ঞতা উল্লেখযোগ্য। সেখানেই তাকে চোখে পড়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ আফরোজার পারভীনের। তিনিই সকালকে নতুন সকালে রূপান্তরের ইচ্ছা পোষণ করেন।