ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
ব্যকটেরিয়ার সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়। ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘অ্যান্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে। অ্যান্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ প্রাণ। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে যেসব রোগ হয়, সেগুলো নিরাময়ের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। তাই ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া রোগের বিপরীতে অ্যান্টিবায়োটিক বেশ ভালো কাজ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জীবাণু এটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। জীবাণুগুলো সাময়িকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এতে আমাদের দেহ সুস্থ হতে শরু করে। আদর্শগতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খায়। তবে অনেক সময় দেখা যায় রোগীরা একটু ঠান্ডা বা কাশি হলে না বুঝেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করা শুরু করলেও মাঝ পথে গিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা কোর্স পূর্ণ করে না। এই বিষয়গুলো বেশ ক্ষতিকর। এতে অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিটেন্স হয়ে পড়ে বা তার কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই অ্যান্টিবায়োটিক যখন তখন সেবন করা যাবে না।
অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরমর্শ নিতে হবে। ফার্মেসি বা দোকানদার বললে তাতেও খাওয়া যাবে না। এ ছাড়া রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে চিকিৎসককে বুঝতে হবে আসলেই রোগীর শরীরে এর প্রয়োজন রয়েছে কি না। সেখানেও পূর্ণ মাত্রা এবং কতদিন খাবে উল্লেখ করে দিতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে চিকিৎসককে খেয়াল রাখতে হবে রোগীর বয়স, ওজন ইত্যাদির দিকে। এ ছাড়া বৃদ্ধ, শিশু ও সন্তান সম্ভবা মায়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের আগে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোগীর কাছে চিকিৎসক জেনে নেবে তার অন্য কোনো রোগ রয়েছে কি না।
সাধারণত সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বরে (ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা) এসব রোগে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। সব রোগেই একই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না। রোগ ভেদে বিভিন্ন রকম ওষুধ রয়েছে। তাই রোগী না বুঝে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে রোগ তো সারবেই না, উল্টো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এবং রোগ দীর্ঘমেয়াদে হতে পারে। যার চিকিৎসা করা জটিল হয়ে যাবে। সম্ভব হলে জরুরি পরীক্ষা করার পর অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া ভালো।
রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ খেতে হবে। অনেকে এক থেকে দুই দিন খেয়ে দেখে রোগ ভালো হয়ে গেছে। তখন খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এটি কিছুতেই করা যাবে না। তাহলে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে। এতে শরীরে এই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রেজিটেন্স লেভেল কমে যায়। অর্থাৎ এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। এতে পরবর্তী পর্যায়ে আরো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া লাগতে পারে।
অনেক সময় যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এ রকম কোনো ওষুধের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিজে নিজে না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে যারা আশে পাশে থাকে অর্থাৎ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও ঐ অ্যান্টিবায়োটকের বিরুদ্ধে রেজিসটেন্স ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অর্থাৎ পরিবারের অন্য লোকেদেরও ঐ অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা কমে যাবে।
তাই যখন তখন নিজে নিজে না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ