লাইনের একপাশে রাখা আমার সকল পাপ
আর অন্যপাশে শাস্তি।
ভেবেছিলাম মায়ের দুধের ঘ্রাণ তার দুধের মতোই ভীষণ পবিত্র হবে,
কিন্তু প্রথমবারের মতো যখন আমি আমার মায়ের দুধ চাখলাম
সেই থেকে আজ অবধি আমার জিভ কলুষিত।
আমার ঠোঁট থেকে প্রথমবারের মতো অস্ফুট স্বরে যেসব কথা বের হয়েছে,
সেসবই আজ পরিণত হয়েছে নির্জলা মিথ্যায়।
রাত গভীরে মায়ের যে গর্ভ ছিল আমার একান্ত আপন,
তা আজ মিলিয়ে গেছে অন্ধকারের বুকে।
দিনের আলো কালসাপের মতো আমার দেহে এমনভাবে ছোবল মেরেছে
যে তার বিষ আমার শরীরের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের চোখের অচেনা চাহনি দিয়ে আমি নিজের সেই চিরচেনা দৃষ্টিকে খুঁজে বেড়াই,
যে দৃষ্টি নিজেই নিজের চোখে চোখ মেলাতে আজ লজ্জা পায়।
যে দৃষ্টি স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় আর
যে দৃষ্টি স্বপ্ন দেখতে ভয় পায় না,
সেই দৃষ্টি আমার দিকে তাকাতে অক্ষম।
হয়তো আমাকে আজীবনই অচেনা মৃতদেহের মাংসস্তূপের ভিড়ে সে ভালোবাসা খুঁজে পেতে হাতড়ে বেড়াতে হবে,
যে ভালোবাসার কথা আমি জীবনের শুরুতে শুনেছিলাম।
বৈধ ও নিষিদ্ধ সেসব মৃতদেহের ভেতর আমাকে সেই ভালোবাসার অমৃত ও নিরন্তর ডালপালা ছড়ানোর স্বাদ
খুঁজে পেতে হবে।
কী করে এমন অভিশাপ আমার কাঁধে বোঝার মতোন চেপে বসল?
লাইনের একপাশে রাখা আমার সকল পাপ
অন্যপাশে শাস্তি।
অনুবাদ : কানিজ ফাতেমা মিথিলা
অমৃতা প্রীতম : বিংশ শতকের প্রথম পাঞ্জাবি নারী কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। অথচ গুগল বা ইউটিউবে তার নাম সার্চ করলে যতটা না তার কাজ বা জীবন সম্পর্কে জানা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি জানা যায় আরেক বিখ্যাত কবি সাহির লুধিয়ানভির সঙ্গে তার প্রেমের বিষয়ে। যদিও সাহিরের প্রতি আবেগ কখনই গোপন করেননি অমৃতা; বরং সমাজের রীতিনীতি, প্রথা উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা এই নারী নিজের প্রেমের কথা জোরের সঙ্গে প্রকাশ করে এসেছেন আজীবন।
তবে কেবল সাহিরের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে বা কয়েকটা প্রেমের কবিতা দিয়ে বিচার করলে অমৃতাকে চেনা যাবে না। জানা যাবে না, কী অসাধারণ সব লেখনী তার কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
১৯১৯ সালের ৩১ আগস্ট ভারতের পাঞ্জাবে (তৎকালীন পাকিস্তানের মান্দি বাহাউদ্দিন নামক স্থানে) অমৃতা প্রীতমের জন্ম। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, লোকগান, জীবনী, আত্মজীবনীসহ শতাধিক বই লিখেছেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগের নির্মমতা নিয়ে লেখা তার কবিতা ‘আজ আখ্যা ওয়ারিশ শাহ নু’ এবং উপন্যাস ‘পিঞ্জর’ পাঠকমহলে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পায়। পিঞ্জর উপন্যাস নিয়ে পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে পুরস্কারজয়ী সিনেমা নির্মিত হয়।
১৯৫৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে পান সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার। এরপর পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য বিদেশি পুরস্কারও। তার লেখা বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর দিল্লিতে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ঘুমের ঘোরে মারা যান অমৃতা প্রীতম।