Wednesday, November 19, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যঅমৃতা প্রীতমের ২ কবিতা

অমৃতা প্রীতমের ২ কবিতা

– কানিজ ফাতেমা মিথিলা
অমৃতা প্রীতম বিংশ শতকের প্রথম পাঞ্জাবি নারী কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। অথচ গুগল বা ইউটিউবে তার নাম সার্চ করলে যতটা না তার কাজ বা জীবন সম্পর্কে জানা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি জানা যায় আরেক বিখ্যাত কবি সাহির লুধিয়ানভির সঙ্গে তার প্রেমের বিষয়ে। যদিও সাহিরের প্রতি আবেগ কখনই গোপন করেননি অমৃতা; বরং সমাজের রীতিনীতি, প্রথা উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা এই নারী নিজের প্রেমের কথা জোরের সঙ্গে প্রকাশ করে এসেছেন আজীবন।
তবে কেবল সাহিরের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে বা কয়েকটা প্রেমের কবিতা দিয়ে বিচার করলে অমৃতাকে চেনা যাবে না। জানা যাবে না, কী অসাধারণ সব লেখনী তার কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে।
১৯১৯ সালের ৩১ আগস্ট ভারতের পাঞ্জাবে (তৎকালীন পাকিস্তানের মান্দি বাহাউদ্দিন নামক স্থানে) অমৃতা প্রীতমের জন্ম। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, লোকগান, জীবনী, আত্মজীবনীসহ শতাধিক বই লিখেছেন। ভারত-পাকিস্তান ভাগের নির্মমতা নিয়ে লেখা তার কবিতা ‘আজ আখ্যা ওয়ারিশ শাহ নু’ এবং উপন্যাস ‘পিঞ্জর’ পাঠকমহলে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা পায়। পিঞ্জর উপন্যাস নিয়ে পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে পুরস্কারজয়ী সিনেমা নির্মিত হয়।
১৯৫৬ সালে প্রথম নারী হিসেবে পান সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার। এরপর পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণসহ একাধিক রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন অসংখ্য বিদেশি পুরস্কারও। তার লেখা বই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর দিল্লিতে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ঘুমের ঘোরে মারা যান অমৃতা প্রীতম।
অমৃতা প্রীতমের নির্বাচিত ২টি কবিতা
১. হঠাৎ দেখা
আমি নিশ্চুপ, শান্ত, অটল দাঁড়িয়ে ছিলাম
কেবল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সমুদ্রে
একটা তুফান ছিল
জানি না
সমুদ্রের মাথায় হঠাৎ কী খেয়াল চাপল
তুফানটাকে একটা থলির ভেতর ভরে
সে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হেসে দূরে চলে গেল
বোকা বনে গেলাম
তবু তার এই কুদরতকে গ্রহণ করলাম
জানতাম
এ ধরনের ঘটনা শত বছরে একবারই ঘটে থাকে
লাখো চিন্তা মাথায় খেলা করছিল
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম
যে একে সঙ্গে নিয়ে নিজের শহরে ফিরব কীভাবে?
আমার শহরের সব গলিই সরু
আমার শহরের সব ছাদই নিচু
আমার শহরের সব দেয়ালই প্রতারক
মনে হলো
তোমাকে কোথাও যদি খুঁজে পেতাম
তাহলে সমুদ্রের মতো একে বুকের ভেতর রেখে
আমরা দুটো তীরের মতো হেসে উঠতে পারতাম
নিচু ছাদ আর সরু গলির শহরে বাস করতে পারতাম
কিন্তু পুরো দুপুরটা
তোমাকে খুঁজতেই কেটে গেল
আর এই আগুন যন্ত্রণা আমি একাই গিলে ফেললাম
আমি একা এক তীর
তীরকেই টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেললাম
এরপর যখন সন্ধ্যা হয়ে এলো
সমুদ্রের তুফানকে সমুদ্রের কাছেই ফিরিয়ে দিলাম
এখন যখন রাত ঘিরে ধরেছে
তখন তোমার দেখা পেলাম
তুমিও উদাস, চুপ, শান্ত আর অটল দাঁড়িয়ে
আমিও উদাস, চুপ, শান্ত আর অটল দাঁড়িয়ে
কেবল দূরে বয়ে যাওয়া সমুদ্রে একটা তুফান রয়ে গেছে
২. একটি দলিল
চাঁদ ও সূর্যের প্রচ্ছদে মোড়ানো
পৃথিবী কী চমৎকার একটি বই
অথচ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দাসত্ব……..
হে খোদা, এসব কি তোমারই দৈববাণী
নাকি নিছক ছাপার ভুল?

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

সাতকাহন
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.