Wednesday, December 11, 2024
spot_img
Homeস্বাস্থ্যকাহননারী স্বাস্থ্যঅনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা : কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা : কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

ডা. হালিদা হানুম আখতার
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ নারী গর্ভধারণ করে। সংখ্যাটা অনেক। তবে এই গর্ভটা কাঙ্ক্ষিত না কি অনাকাঙ্ক্ষিত- এমন প্রশ্ন করা হলে, প্রায় ৪৮ শতাংশ নারী বা ৩০ লাখের মধ্যে অর্ধেক নারীই বলবে, এটি সে চায় না।
এর অনেক কারণ হতে পারে। যেমন : কোলের সন্তান খুব ছোট, এর মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান নিতে অনাগ্রহী; মায়ের বয়স কম, তাই সন্তান নিতে চাইছে না; বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকার কারণে সন্তান নিতে অনাগ্রহী; অথবা একজন মায়ের হয়তো ৩৫ বছর হয়ে গিয়েছে, তাঁর পরের গর্ভটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই সন্তান চান না। এসব বিভিন্ন কারণে একজন মায়ের কাছে তাঁর গর্ভটা আকাঙ্ক্ষিত হতে পারে। তাই সংখ্যাটা খুবই বিপদজনক।
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা কেন ঝুঁকিপূর্ণ?
আমি একটি জিনিসকে না চাইলে বা আমার পেটে যে গর্ভটি রয়েছে, সেটি না চাইলে, এর জটিলতা বা ঝুঁকিগুলো কী হতে পারে?
আমি এই গর্ভ চাইবো না, তাই গর্ভপাতের জন্য এগিয়ে যাবো। এমন একজন সেবাদানকারীকে চাইবো, যিনি গর্ভপাত করে দেবেন। আবার সবার হাতে এতো টাকা থাকে না যে চিকিৎসক বা নার্সের কাছে যাবেন। অথবা প্রশিক্ষিত কোনো মানুষের কাছে যাবেন। আরেকটি বিষয় হতে পারে, ব্যক্তিটি জানেই না, কার কাছে, কোথায় ও কখন যেতে হবে। এই জ্ঞানের অভাবের জন্য বিরাট জটিলতার সম্মুখিন হয়। তখন হয়তো সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়, এমন কারো কাছে যায়। অনেকে তো গাছ, পাতা, শিকড় ইত্যাদি দিয়ে অ্যাবোরশন বা গর্ভপাত করায়।
ক্যাপশন : বিষয়গুলোতে একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়। ছবি : সংগৃহীত
ক্যাপশন : বিষয়গুলোতে একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়। ছবি : সংগৃহীত
এতে কী হয়? গাছের ডগা জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হলে, দেখা যাচ্ছে, জায়গাটি ফুটো হয়ে যাচ্ছে। এতে ভীষণ ব্যথা হবে। এরপর ইনফেকশন ও সেপটিক হয়ে যাবে। এতে নারী মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে এ দেশে অনেক গবেষণা রয়েছে। এগুলো এখন অনেকটা কমে এলেও মাতৃমৃত্যুর গবেষণার সংখ্যা দেখলে, দেখা যাবে, সাত শতাংশ মৃত্যু এখনও গর্ভপাতের জটিলতার জন্য হয়।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার

তবে বিষয়গুলোতে একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়।
যেমন –

  • এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং সঠিক তথ্য জানতে হবে।
  • জটিলতাগুলো বুঝতে হবে।
  • মাসিক নিয়ন্ত্রণ ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • সঠিক সময়ে, সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জ্ঞান থাকতে হবে। কী ধরনের সেবাদানকারীর কাছে গেলে সে সঠিক ব্যবস্থাপনা পাবে এবং সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারবে সেটা জানা জরুরি।
  • ১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশে পরিবার-পরিকল্পনা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সাতটির বেশি এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। আপনি পরিবার- পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য ক্লিনিক যেতে পারেন। কমিউনিটি লেভেল থেকে শুরু করে, থানা ও জেলা পর্যায় যেখানেই যান না কেন, সরকারি পর্যায়ে পরিবার -পরিকল্পনা ক্লিনিক পাবেন। এনজিওরা এই পদ্ধতি দিচ্ছে। সোস্যাল মার্কেটিং কোম্পানির মাধ্যমে যেকোনো ফার্মেসিতে বা দোকানেও এই পদ্ধতি পেতে পারেন।
  • খাওয়ার বড়ি ব্যবহার করতে পারেন। প্যাকেটের গায়ের মধ্যেই লেখা থাকে ব্যবহারবিধি।
    সুতরাং অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পরিবার- পরিকল্পনা পদ্ধতি জীবন বাঁচানো প্রযুক্তি। এটা ব্যবহার না করলে এই ধরনের গর্ভ হবে। এটি থেকে মুক্তি পেতে ভুল ব্যবস্থাপনার কাছে চলে যাবেন। এতে শারীরিক ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই নারীস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিষয়টিতে সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।

লেখক :
রোকেয়া পদকে ভূষিত বিশিষ্ট নারী ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments